Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

ওঁরা আটকে অগ্নিব্যূহে, বাইরে আর্তি সঙ্গীদের 

পোড়া রাসায়নিকের কটু গন্ধ। চার দিক ধোঁয়ায় ঢেকেছে। জল থইথই কারখানা-চত্বর। দমকল-পুলিশ ঘিরে রেখেছে চার দিক।

দাউদাউ: জ্বলছে নিউ ব্যারাকপুরের চেয়ার কারখানা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

দাউদাউ: জ্বলছে নিউ ব্যারাকপুরের চেয়ার কারখানা। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:৪৮
Share: Save:

পোড়া রাসায়নিকের কটু গন্ধ। চার দিক ধোঁয়ায় ঢেকেছে। জল থইথই কারখানা-চত্বর। দমকল-পুলিশ ঘিরে রেখেছে চার দিক। বাইরের থিকথিকে ভিড় থেকে ছিটকে বেরিয়ে কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করলেন রোগা চেহারার এক প্রৌঢ়। আটকে দিল পুলিশ।

চিৎকার করে উঠলেন তিনি, “কেন ঢুকতে দেবেন না? আমার সহকর্মীরা আটকে রয়েছে। ওরা বেঁচে আছে কি না, কে দেখবে? আসলে তোমরা লাশ গুম করার চেষ্টা করছ।” তিনি গণেশ বসু। বাড়ি দুর্গানগরে। সোমবার নিউ ব্যারাকপুর যুগবেড়িয়ার একটি চেয়ার কারখানায় আগুন লাগে। পাঁচ শ্রমিক কারখানায় আটকে পড়েছেন। তাঁদের জন্যই আর্তি সেখানকার ২২ বছরের শ্রমিক গণেশবাবুর।

ভিড়ের থেকে একটু দূরে মাথায় হাত দিয়ে বসে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলেন নিমাই পড়িয়া। তাঁর বছর পঁচিশের ছেলে সঞ্জীব কারখানায় ঢুকে আর বেরোননি। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু কী বললেন? “ওঁরা মন্ত্রী মানুষ। কী আর বলবেন? আমি ছেলে ফিরে পাব কি না, এটা কি কেউ বলতে পারবে,” ডুকরে কেঁদে উঠলেন নিমাইবাবু।

বিডন স্ট্রিটের বাসিন্দা নিমাইবাবু ছাপাখানায় কাজ করেন। বললেন, “বেলুড়ে আমার দু’কাঠা জায়গা ছিল। সেটা বেচে ছেলেটাকে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়েছিলাম, জানেন। ভেবেছিলাম ভাল কাজ পাবে।” সপ্তাহ তিনেক আগে এই কারখানায় কাজ পান সঞ্জীব। কারখানারই এক কর্মী সোমবার দুপুরে নিমাইবাবুকে আগুন লাগার খবর দেন। অগ্নিকাণ্ডে আটকে পড়া শ্রমিকদের এক জন হলেন নিত্যানন্দ রায়। কারখানার বাইরে ঠায় বসে ছিলেন তাঁর মাসতুতো ভাই তপন শীল। সঙ্গে ছিলেন নিত্যানন্দের জামাইবাবু সোমনাথ বিশ্বাস। সাজিরহাটের বাসিন্দা নিত্যানন্দ বছর চারেক আগে কারখানায় কাজ পান।

সোমনাথবাবু বলেন, “সাড়ে ১২টা নাগাদ কারখানারই এক কর্মী খবর দেন। সঙ্গে সঙ্গে ওর মোবাইলে ফোন করি। এক বার বেজে কেটে যায়। ছাদের গেটটা খোলা থাকলে অন্তত নীচে লাফাতে পারত। হাত-পা ভাঙলেও প্রাণে বাঁচত।” গণেশবাবু বলেন, “আমি কোনও রকমে বেরিয়ে আসি। দেখি, দোতলার জানলার কাচ ভেঙে বেরোনোর চেষ্টা করছে নিত্যানন্দেরা। কিন্তু শক্ত গ্রিল ভাঙবে কী করে? ছাদের গেট বন্ধ ছিল। খোলা থাকলে হয়তো আজ ওরা বাইরে বেরোতে পারত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Steel Chair Factory Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE