Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘সবাই বলছিল ছেলেধরা, তাই আমিও দিলাম এক ঘা’

সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন এলাকার মতোই ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানেও বেশ কিছু দিন ধরে ছেলেধরা গুজব জাঁকিয়ে বসেছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৭
Share: Save:

কাকে ধরে পেটানো হচ্ছে, যা রটছে, তা সত্যি কি না, সে সব খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই। স্রেফ সবাই মারছে বলে তিনিও ধারালো অস্ত্রের এক ঘা দিয়ে দিয়েছিলেন বলে জানালেন বছর সত্তরের বৃদ্ধ বন্ধন ওরাওঁ। তবে পুলিশ প্রাতমিক তদন্তে জানতে পেরেছে, এই বৃদ্ধই রবিবার রাতে তাসাটি চা বাগানে গণপিটুনিতে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যেই ৭২ বছরের ওই বৃদ্ধ সমেত ১৭জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃদ্ধ সহ তিন জনকে সোমবার পাঁচদিনের জন্য পুলিশ নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই ঘটনায় জড়িত আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে।

তবে চব্বিশ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও গণপিটুনির ঘটনায় মৃতের পরিচয় এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।

সূত্রের খবর, আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন এলাকার মতোই ফালাকাটার তাসাটি চা বাগানেও বেশ কিছু দিন ধরে ছেলেধরা গুজব জাঁকিয়ে বসেছিল। এরই মধ্যে রবিবার রাতে এলাকায় এক ভবঘুরেকে দেখতে পেয়ে সন্দেহ দানা বাঁধে স্থানীয়দের মধ্যে। বাগানের ফুটবল মাঠ সংলগ্ন এলাকায় তাঁকে ধরে শুরু হয় গণপিটুনি। জটেশ্বর ফাঁড়ি থেকে পুলিশকর্মীরা ছুটে যান। কিন্তু জনতা তাঁদের আক্রমণ করতে উদ্যত হয়। পিছু হটতে বাধ্য হন ওই পুলিশকর্মীরা। এর পরই ফালাকাটা, মাদারিহাট, বীরপাড়া থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে ছুটে যায়। কিন্তু অভিযোগ, তত ক্ষণে ওই ব্যক্তিকে ভোজালি, কুড়ুল দিয়ে কোপানো শুরু হয়ে গিয়েছে। জনতা তাঁকে বড় বড় পাথর দিয়েও আঘাত করে বলেও অভিযোগ।

সূত্রের খবর, এই অবস্থায় পুলিশ প্রথমে লাঠি চালায়। তারপর শূন্যে দুই রাউন্ড গুলিও চালায়। এরপর জখমকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে বীরপাড়া রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল ও তারপর আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। আলিপুরদুয়ারে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপরই বিভিন্ন মোবাইলের ভিডিও ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের ধরার কাজ শুরু করে পুলিশ। সূত্রের খবর, তখনই উঠে আসে বৃদ্ধ বন্ধন ওরাওঁ-এর নাম। রাতেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় বন্ধন দাবি করেন, ‘এলাকার সবাই বলছিল ছেলেধরাকে ধরা হয়েছে। তাই কিছু না ভেবে আমি গিয়ে ওকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করি।’ তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, রবিবারের ঘটনায় অন্যতম নেতৃত্বও দেয় বন্ধনই। তবে সে ছাড়াও আরও কেউ কেউ নেতৃত্ব দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠী জানিয়েছেন, এই মুহুর্তে ওই এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ঘটনায় জড়িত বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Violence Lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE