Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

প্রতিবেশীদের বাধায় ক্যানসার হাসপাতালে গরহাজির ৭০ শতাংশ

কেন এমন অবস্থা? করোনা আতঙ্কের ফলেই এমন পরিস্থিতির কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেখানে চিকিৎসাধীন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগীর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দীক্ষা ভুঁইয়াকলকাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১২
Share: Save:

চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী মিলিয়ে হাসপাতালের কর্মী সংখ্যা ৮৫০। অথচ উপস্থিত মাত্র ২৫০! এই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক-কর্মীর ঘাটতির কারণে ভেঙে পড়তে চলেছে দক্ষিণ শহরতলির ওই ক্যানসার হাসপাতালের পরিকাঠামো। নামমাত্র পরিষেবা দিয়েই ক্যানসার আক্রান্তদের ফেরাতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

কেন এমন অবস্থা? করোনা আতঙ্কের ফলেই এমন পরিস্থিতির কথা বলছেন কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সেখানে চিকিৎসাধীন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগীর শরীরে কোভিড-১৯ ভাইরাস পাওয়া গিয়েছে। অভিযোগ, এই খবর জানাজানি হতেই হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের অনেককেই পাড়া বা আবাসন থেকে বেরোতে দিচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ওই প্রতিবেশীরা ভেবেই নিয়েছেন, করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন হাসপাতালের সব কর্মী-চিকিৎসক। সুতরাং তাঁরাও ওই কর্মী এবং চিকিৎসকের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত হতে পারেন।

মানুষের এই অসহযোগিতার জন্য ক্যানসার রোগীদের যাতে চিকিৎসা বন্ধ না হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই আবেদন জানিয়েছেন ঠাকুরপুকুরের ‘সরোজ গুপ্ত ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর অধিকর্তা অর্ণব গুপ্ত। পাশাপাশি, হাসপাতালের তরফে স্বাস্থ্য ভবন এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বিষয়টি জানিয়ে সাহায্য চেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: পুলিশ কড়া হতেই রাস্তা ফাঁকা, অন্যত্র উল্টো ছবি

কেউ লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত, কেউ ফুসফুসের ক্যানসারে। কারও কেমোথেরাপি চলছে। কাউকে নিয়ম করে রক্ত দিতে হচ্ছে। অনেকের অবস্থাই সঙ্কটজনক। যাঁদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা না করালে বাঁচানো অসম্ভব। অথচ আগে থেকে ভর্তি হওয়া সঙ্কটজনক কিছু রোগীকে রেখে বাকিদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রের খবর, নতুন রোগী এলেও তাঁকে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অবহেলিত হচ্ছেন কেমোথেরাপি নিতে আসা রোগীরাও। কর্তৃপক্ষের কথায়, ‘‘করোনা সংক্রমণের এই পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, তা অজানা। তত দিন ক্যানসার রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় এ ভাবে বাধা আরও বহু প্রাণ কাড়বে। কারণ, হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকেরা না এলে ওই রোগীদের দেখবেন কারা?’’

ওই ক্যানসার হাসপাতালেই কাজ করেন ওটি-টেকনিশিয়ান এবং সিস্টার দম্পতি শাশ্বত এবং কৌশল্যা মাইতি। অভিযোগ, বিষ্ণুপুর খ্রিস্টানপাড়ার ওই দম্পতির প্রতিবেশীদের কথা শুনে বিষ্ণুপুর থানা থেকে পুলিশ গিয়ে তাঁদের বাড়িতে থাকার নিদান দিয়েছে। বাইরে বেরোলে সরকারি কোয়রান্টিনে পাঠিয়ে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই থানা এলাকারই বাসিন্দা, হাসপাতালের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের কর্মী মমতা ঘোষকেও একই হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, মাকালিয়া পূর্বপাড়ার ওই বাসিন্দাকে কল থেকে জলও নিতে দিচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। পাড়ার মুদির দোকানিও জিনিস দিতে চাইছেন না তাঁদের।

হাসপাতালের অধিকর্তা বলেন, ‘‘ওই রোগীর সংক্রমণ ধরা পড়ার পরের দিন সব মিলিয়ে হাসপাতালে কর্মী এসেছিলেন একশো জন। তার পরের দিন মাত্র কুড়ি! বৃহস্পতিবার, পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। অন্তত ২২০ জন উপস্থিত আছেন। প্রথমে মনে করেছিলাম কর্মীরাই আতঙ্কিত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেশির ভাগেরই না আসার কারণ প্রতিবেশীরা। পাড়া থেকে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে যে বেরোলে আর পাড়ায় ঢুকতে দেওয়া হবে না!’’ তাঁর অভিযোগ, অথচ সরকারের লকডাউন উপেক্ষা করে এই সাধারণ মানুষেদেরই অনেকে অপ্রয়োজনে রাস্তায় বেরোচ্ছেন। সেখানে জরুরি পরিষেবায় যেতে এত বাধা কেন?

মানুষকে সচেতন করতে মুখ্যমন্ত্রীর বারবার আবেদনের পরেও কেন এমন পরিস্থিতি? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে এ দিন ফোন এবং মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর দেননি। বিষ্ণুপুর থানার কেন এই ভূমিকা? ডায়মন্ড হারবারের পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগানকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও কোনও উত্তর মেলেনি।

আরও পড়ুন: মৌলালি থেকে বেহালা, করোনা-প্রচারে মুখ্যমন্ত্রী

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেনআপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Cancer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE