Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja 2020

ভিড়ের দৌড়ে তবু ক্ষান্ত দিচ্ছেন না পুজোকর্তারা

দেশপ্রিয় পার্কের এক পুজোকর্তার দাবি, ষষ্ঠীর বিকেল থেকেই তাঁদের পুজো জনজোয়ারে ভেসে যেত। সপ্তমী থেকে নবমী, ১৩-১৪ লক্ষের মতো লোক হত।

দক্ষিণের শ্রেষ্ঠ মণ্ডপ সাবর্ণপাড়া বড়িশা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।

দক্ষিণের শ্রেষ্ঠ মণ্ডপ সাবর্ণপাড়া বড়িশা সর্বজনীন দুর্গোৎসব সমিতি।

নীলোৎপল বিশ্বাস ও আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩০
Share: Save:

আদালতের নির্দেশের পরেও ভিড়ের নিরিখেই একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে শহরের বহু পুজো কমিটি! মণ্ডপের আশপাশে ভিড় জমতে না দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টাও নেই পুজোকর্তাদের একটি বড় অংশের মধ্যে। মণ্ডপে প্রবেশ নিষিদ্ধ জেনেও ষষ্ঠীর দুপুর থেকে বাড়ছিল দর্শকদের ভিড়।

যা দেখে পুজোকর্তাদের অনেকেরই বক্তব্য, মণ্ডপের বাইরের ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড পর্যন্ত কত লোক হল, তার বিচারেই এ বার ঠিক হবে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার মধ্যে কে কাকে টেক্কা দিল! ভাবখানা এমন যে, সংক্রমণের রেখচিত্র যতই বাড়ুক, আদালত যা-ই নির্দেশ দিক, ভিড়ের উৎসব চাই-ই চাই!

সুরুচি সঙ্ঘের পুজোকর্তা স্বরূপ বিশ্বাস যেমন দাবি করলেন, প্রতি বার তাঁদের পুজো দেখতে ষষ্ঠীতেই পাঁচ লক্ষ লোকের ভিড় হয়। অষ্টমী, নবমীতে তা ১০ লক্ষ ছাড়িয়ে যায়। স্বরূপ বললেন, “এ বার লোক কোথায়? অনেকেই অনলাইনে পুজো দেখছেন। ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড পর্যন্ত যত জন আসবেন, তার নিরিখেই ভিড়ের হিসেব হবে। সেটাই মনে হয় এ বার ভিড়ের প্রতিযোগিতার মাপকাঠি!”

আরও পড়ুন: জলসা দিয়ে পুজো শুরু বিজেপির​

দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমারের আবার দাবি, ষষ্ঠীর বিকেল থেকেই তাঁদের পুজো জনজোয়ারে ভেসে যেত। সপ্তমী থেকে নবমী, ১৩-১৪ লক্ষের মতো লোক হত। এ বার অনেকটা কম হলেও একেবারে মন্দ নয় বলেই তাঁর মন্তব্য। সুদীপ্ত বললেন, “করোনার একটা ভয় থাকলেও আমার মনে হয়, যতটুকু আসা যায়, সেই পর্যন্ত দর্শনার্থীরা আসবেনই। তার নিরিখেই ভিড়ের হিসেব রাখব। একটু লোক না হলে চলে!”

আরও পড়ুন: আজ মহাসপ্তমী, রাজ্যে পুজো শুরু, তবে ভিড় নয়

টালা বারোয়ারির পুজোর এ বার শততম বছর। অন্যান্য বার সেখানে ষষ্ঠী থেকেই ঘণ্টায় ৩৫-৪০ হাজার লোক হতে শুরু করে বলে উদ্যোক্তাদের দাবি। কিন্তু এ বার অনেকটাই কম। পুজোর উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বললেন, “আমাদের মতো পুজো উদ্যোক্তাদের মন ভেঙে গিয়েছে। তবু অপেক্ষা করছি, যতটুকু দেখা যায়, সেই পর্যন্ত কত লোক এলেন, তা জানার জন্য।” একই অপেক্ষা নাকতলা উদয়নের মতো পুজোর কর্তাদেরও। পুজোকর্তা বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের মন্তব্য, “ষষ্ঠীতে ১২ লক্ষ, সপ্তমীতে ১৪ লক্ষ আর অষ্টমী এবং নবমীতে অগুনতি লোক হয়। এ বার সংখ্যা যে খুব কমবে, তা-ও বলতে পারছি না। আশপাশের বহু পুজো আদালতের নির্দেশের পরে বন্ধ হতে বসেছে। সেই ভিড়টাই এ বার আমাদের এখানে আসতে পারে।”

কলেজ স্কোয়ার, কাশী বোস লেন, কুমোরটুলি সর্বজনীন বা জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজো কমিটির সদস্যেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, ভিড়ের প্রতিযোগিতায় এ বার তাঁরা যাচ্ছেন না। কলেজ স্কোয়ারের পুজোকর্তা বিকাশ মজুমদার বললেন, “ট্রেনের দর্শকের ভিড়টাই নেই। ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড পর্যন্ত যত জন আসবেন, তা আর এমন কী!” দমদম পার্ক তরুণ দলের পুজোকর্তা বিশ্বজিৎ প্রসাদের কথায়, “লক্ষ লক্ষ লোকের ভিড় কোথায়? তবু যাঁরা আসছেন, তাঁরা পুজো না দেখে থাকতে পারেন না। ক’দিনেই বোঝা যাবে, এই পুজো-পাগল লোক কত!”

বাগবাজার ও শ্রীভূমির মতো দর্শনার্থীদের ঢল নামানো পুজোর কর্তারাও জানাচ্ছেন, ভিড় কম হলেও শূন্য নয়। বাগবাজারের পুজোকর্তা গৌতম নিয়োগী বললেন, “অন্যান্য বার মানুষের মাথা গোনা যেত না। ষষ্ঠীতে সেই সংখ্যায় না হলেও লোকজন এসেছেন। আমরা খুশি।” শ্রীভূমির পুজোকর্তা সুজিত বসু ফোন না ধরলেও আর এক কর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামী বললেন, “প্রতি বার পুজো করা হয় লোকজনকে দেখাতে। এ বার সেই মানুষের প্রবেশই নিষিদ্ধ। তবে যাঁরা আসছেন, তাঁরা দেখতে পারছেন ভেবেই আমরা খুশি।”

করোনার বিপদে কি ভিড় করে পুজো দেখা জরুরি? একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায় বললেন, “লোকে দেখবেন না? আদালত আগে এই ১০ মিটারের কথা জানালে ভাল করে পুজো দেখানোর ব্যবস্থা করতাম।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE