Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Crime

একতলায় বৃদ্ধা, দোতলায় বৃদ্ধ, নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের পিছনে সম্পত্তি! অনুমান পুলিশের

তবে দম্পতির পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীদের ধারণা, এই খুনের পিছনে সম্পত্তি একটা বড় কারণ হতে পারে।

খুনের পিছনে সম্পত্তি একটা বড় কারণ হতে পারে বলে ধারণা তদন্তকারীদে। —নিজস্ব চিত্র।

খুনের পিছনে সম্পত্তি একটা বড় কারণ হতে পারে বলে ধারণা তদন্তকারীদে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৯ ১৩:৩৩
Share: Save:

বার কয়েক ডাকাডাকি করে সাড়া মেলেনি। এর পর ধাক্কা দিতেই খুলে যায় ভেজানো দরজা। ঘরে ঢুকতেই চমকে যান স্থানীয় কলমিস্ত্রি হরি। দেখেন দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মুখে পড়ে রয়েছে বৃদ্ধার নিথর দেহ

মঙ্গলবার সকাল ৯টা। বৃদ্ধাকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়েই আতঙ্কে বেরিয়ে আসেন হরি। খবর দেন ওই বাড়ির তলাতেই বসা ইস্ত্রির দোকানদারকে। তিনিও খোলা দরজা দিয়ে বৃদ্ধাকে ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে চেঁচামেচি জুড়ে দেন। খবর দেন প্রতিবেশীদের। খবর পেয়ে তাঁরা ভিতরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠেন। দেখেন, সেখানে শোওয়ার ঘরের মেঝের উপর পড়ে রয়েছে বৃদ্ধের দেহ।

নেতাজি নগরের সত্তরোর্ধ দম্পতি দিলীপ এবং স্বপ্না মুখোপাধ্যায় খুনের ঘটনায় এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।

আরও পড়ুন: নেতাজিনগরে রহস্যজনক মৃত্যু নিঃসন্তান বৃদ্ধ দম্পতির, সম্পত্তির কারণেই কি খুন? ধন্দে পুলিশ​

বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে দিলীপবাবুর বাড়ি। দোতলা বাড়ির পাশে রয়েছে বেশ খানিকটা ফাঁকা জমি। মূল বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ভাড়া থাকেন গোপা ঘোষ নামে এক মহিলা। রয়েছে কয়েকটি দোকানও। এলাকায় বেশ অবস্থাপন্ন হিসাবেই পরিচিত নিঃসন্তান ওই দম্পতি। স্থানীয় বাসিন্দরা জানিয়েছেন, আগে রং এবং রাসায়নিকের ব্যবসা করতেন দিলীপবাবু। দীর্ঘদিন সেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এক ভাই ছাড়া দিলীপবাবুর অন্য কোনও কাছের আত্মীয়ের খবর দিতে পারেননি প্রতিবেশীরা। ওই দম্পতির বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করা তরুণী লতাও অন্য কোনও আত্মীয়ের ব্যপারে কিছু জানাতে পারেননি।

পুলিশ সূত্রে খবর, দিলীপ বা স্বপ্নার দেহে কোনও ধারালো অস্ত্রের আঘাত বা রক্তের চিহ্ন নেই। তদন্তকারীদের অনুমান শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ওই দু’জনকেই। ৭১ বছর বয়সী স্বপ্নার গলায় একটি দড়ি জড়ানো ছিল। সেখান থেকে পুলিশের সন্দেহ ওই দড়ির ফাঁস দিয়েই শ্বাসরোধ করা হয়েছে তাঁকে। অন্যদিকে দিলীপকেও শ্বাসরোধ করে খুনের চিহ্ন পেয়েছেন তদন্তকারীরা।

ঘটনাস্থলে ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) সুদীপ সরকার ছাড়াও যান কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা। সঙ্গে ছিলেন গোয়েন্দা বিভাদের আধিকারিকরাও। পুলিশ কুকুরও নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। মুরলিধর শর্মা বলেন,‘‘ নীচের তলার ঘর গুলোতে তছনছ করা হয়েছে। জিনিস পত্র এধার ওধার পড়ে রয়েছে। প্রায় লাখখানেক টাকা খোয়া গিয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আরও কিছু মূল্যবান জিনিসও খোয়া গিয়েছে।”

বেহালায় বৃদ্ধা খুনে যেমন প্রথম থেকেই স্পষ্ট ছিল, লুঠের উদ্দেশ্যেই খুন। এখানে লুঠই খুনের মোটিভ কী না তা নিয়ে এখনও সংশয়ে গোয়েন্দারা। কারণ,দম্পতির পরিচারিকার সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীদের ধারণা, এই খুনের পিছনে সম্পত্তি একটা বড় কারণ হতে পারে। কারণ ওই দম্পতির বাড়ি-জমি মিলিয়ে যা সম্পত্তি রয়েছে তার বর্তমান বাজার দর কোটি টাকারও বেশি। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই পরিচারিকা জানিয়েছেন, প্রায়ই দিলীপবাবুর কাছে ফোন আসত প্রোমোটারদের। বিভিন্ন সময়ে বৃদ্ধকে ওই জমি বিক্রি করতে চাপ দেওয়া হয়েছে। বৃদ্ধ বিক্রিতে রাজি ছিলেন না। পুলিশ বৃদ্ধের মোবাইলের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখছে ওই প্রোমোটারদের পরিচয় জানতে।

আরও পড়ুন: সেতুতে গাড়ি রেখে ‘নিরুদ্দেশ’ সিসিডি-র মালিক, এসএম কৃষ্ণার জামাই সিদ্ধার্থ​

জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে দোকানদার থেকে শুরু করে ভাড়াটেকেও। তবে গোয়েন্দাদের দাবি, কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সূত্র পাওয়া গিয়েছে। সেই সূত্র ধরে এগনোর চেষ্টা করছেনতাঁরা। তবে প্রোমোটিং চক্রের পাশাপাশি, আত্মীয়দের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘বৃদ্ধের কোনও উইল করা ছিল কি না তা দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে দেখা হচ্ছে দম্পতি মারা গেলে কে ওই সম্পত্তির মালিকানা পাবেন।’’ অর্থাৎ আত্মীয়দের ভূমিকাও পুলিশের কাছে এই তদন্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তবে খুনের মোটিভ লুঠ, এই তত্ত্বকেও উড়িয়ে দিতে পারছেন না গোয়েন্দারা। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘দেহের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সোমবার রাতেই খুন করা হয়েছে দম্পতিকে।” তদন্তকারীদের ধারণা, দরজা খুলেছিলেন স্বপ্না। খুলতেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আততায়ী। তবে তদন্তকারীদের অনুমান, একজনের বেশি ছিল আততায়ী। স্বপ্নাকে ধরাশায়ী করে আততায়ীরা দোতলায় বৃদ্ধর উপরে হামলা করে বলে অনুপান পুলিশের। এক তদন্তকারী বলেন,‘‘যে ভাবে ঘর তছনছ করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে খুব তাড়াহুড়োয় ছিল আততায়ীরা। তাদের স্পষ্ট কোনও ধারণাও ছিল না কোথায় কি রয়েছে।” এই সূত্রগুলি থেকে মনে করছেন তদন্তকারীরা যে বেহালার মত এখানে লুঠও খুনের মোটিভ হতে পারে। কয়েক মাস আগেই ওই বাড়ির একাংশ রং করানো হয়। সেই মিস্ত্রিদেরও খোঁজ করছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder Police Elderly Couple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE