Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

দিনভর দৌড়ে বেড়িয়েও শূন্য অনলাইন অর্ডারের ঝুলি

অনলাইনে বরাত দিয়ে খাবার আনানোর সংস্থাগুলির ব্যবসায় টানা লকডাউনের থেকেও বেশি প্রভাব ফেলেছে গ্রাহকদের ছোঁয়াচ বাঁচানোর চেষ্টা।

বরাতের অপেক্ষায়। পার্ক সার্কাসে এক রেস্তরাঁর কাছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

বরাতের অপেক্ষায়। পার্ক সার্কাসে এক রেস্তরাঁর কাছে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৬
Share: Save:

‘‘লকডাউন শুরুর আগে প্রতিদিন অন্তত এক হাজার টাকা আসতই। গত ২২ এপ্রিল, মঙ্গলবার সারা দিনে ২০০ টাকা এসেছিল। পরের দিন একটাও অর্ডার হয়নি। আর ২৪ তারিখ শুক্রবার সকাল আটটায় বেরিয়েছিলাম। দুপুর পর্যন্ত একটাও অর্ডার এল না।’’— অর্ডারের অপেক্ষায় মোবাইলে চোখ রেখে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যাচ্ছিলেন সুমন রায়। ঘটনাস্থল পার্ক সার্কাস মোড়। সুমনের পাশেই দাঁড়ানো, অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থার পোশাক পরা এক যুবক বললেন, ‘‘পরের দিন কোথায় দাঁড়ালে ভাল অর্ডার পাওয়া যাবে, তা খুঁজতে খুঁজতেই এক দিনের রোজগার শেষ। সুমনের ২২ তারিখের ২০০ টাকা বেরিয়ে গিয়েছে স্রেফ বাইকে তেল ভরতে। পরের দু’দিন কেটে গিয়েছে কোন রেস্তরাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে অর্ডার মিলবে, শুধু তা খুঁজতে গিয়েই।’’

অনলাইনে বরাত দিয়ে খাবার আনানোর সংস্থাগুলির ব্যবসায় টানা লকডাউনের থেকেও বেশি প্রভাব ফেলেছে গ্রাহকদের ছোঁয়াচ বাঁচানোর চেষ্টা। সব সংস্থাই জানাচ্ছে, প্রথম দিকে ‘কনট্যাক্টলেস ডেলিভারি’র পথে হেঁটে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা হলেও দিল্লিতে এক ডেলিভারি পার্টনারের করোনা সংক্রমণের খবর প্রকাশ্যে আসার পরপরই কলকাতায় অর্ডারের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি নেমে গিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শপিং মল বন্ধ থাকার সমস্যা। যে রেস্তরাঁগুলি শপিং মলের বাইরে, শুধু সেগুলিই অনলাইন সংস্থার মাধ্যমে খাবারের অর্ডার নিচ্ছে।

মধ্য কলকাতার বাসিন্দা মহম্মদ ঔরঙ্গজেব নামে এক ডেলিভারি পার্টনার জানালেন, ওই রেস্তরাঁগুলির সামনে হাজির থাকাটাই এখন তাঁদের কাছে কার্যত এক প্রতিযোগিতা! এমন কয়েকটি রেস্তরাঁর তালিকা বানিয়ে সেগুলিকে কয়েকটি জ়োনে ভাগ করে নিচ্ছেন তাঁরা। দিনের কোন সময়ে কী ধরনের খাবারের অর্ডার আসতে পারে, সেই মতো রেস্তরাঁর সামনে ছুটে যাচ্ছেন। অন্যেরাও একই পথ নেওয়ায় সংশ্লিষ্ট রেস্তরাঁর সামনে ডেলিভারি পার্টনারদের ভিড়ও হচ্ছে প্রবল। এক দুপুরে দক্ষিণ কলকাতার লর্ডস মোড়ের কাছে একটি চিনা রেস্তরাঁর সামনে দেখা গেল তেমনই ভিড়। পরপর মোটরবাইক দাঁড় করানো। তমাল সামন্ত নামে এক ডেলিভারি পার্টনার বললেন, ‘‘দুপুরে এখানেই অর্ডার হবে বেশি। অনেকেই আজ একটাও অর্ডার পাননি। তাই চলে এসেছেন।’’ কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশের গাড়ি আসতে দেখে বাইক নিয়ে সরে পড়লেন কয়েক জন। কী ব্যাপার? তমাল বলেন, ‘‘রাস্তায় ছাড় রয়েছে ঠিকই। কিন্তু কোনও রেস্তরাঁর সামনে ভিড় করতে দেখলেই পুলিশ ধরছে। কী করে তাঁদের বোঝাব, খাবারের জন্য যেমন অভুক্তেরা ছুটে যায়, সে ভাবে আমরাও এক জায়গায় ছুটছি অর্ডার আসবে ভেবে। তাতেই ভিড় হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: স্মৃতিতে মন্বন্তর, করোনার ত্রাণে দান বৃদ্ধ-বৃদ্ধার

কিন্তু ডেলিভারি পার্টনারদের জন্য তো সংস্থাগুলি ত্রাণ তহবিল তৈরি করছে...! কথা থামিয়ে দিয়ে সকলে বলে উঠলেন, ‘‘একটা টাকাও আমরা পাইনি। এখনও অর্ডার পৌঁছে দিলে তবে টাকা। কিন্তু অর্ডারই তো নেই।’’ ডেলিভারি পার্টনার শোয়েব আলির আবার বক্তব্য, ‘‘আমাদের মতো কর্মীদের নিরাপত্তায় আরোগ্য সেতু অ্যাপ বাধ্যতামূলক করেছে সংস্থা। যাতে খাবার দিতে গিয়ে কোনও আক্রান্তের কাছাকাছি এসে যাওয়ায় বিপদ হয়েছে কি না বুঝে নেওয়া যায়। কিন্তু শুধু নিরাপত্তায় তো পেট ভরে না। আমরা খাব কী?’’ বাড়িতে পাঁচ বছরের মেয়ে, স্ত্রী, বাবা-মাকে নিয়ে শোয়েবের সংসার।

আরও পড়ুন: রোজা ভেঙে দু’দিনের শিশুকে রক্তদান

অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থা সুইগির পূর্বাঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেন, ‘‘ডেলিভারি পার্টনারদের সুরক্ষা আমাদের কাছে সবার আগে। তাঁদের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে ১৪ দিনের আয় নিশ্চিত করে কভারেজ দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গে গুরুতর সমস্যায় পড়ছেন যাঁরা, তাঁদের খাবারও পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’ জ়োম্যাটোর প্রতিষ্ঠাতা দীপেন্দ্র গয়াল বলেন, ‘‘ডেলিভারি পার্টনারদের করোনা বিমার পাশাপাশি ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থসাহায্যও করা হচ্ছে। গুরুতর সমস্যায় পড়া সকলের কাছেই সেই সাহায্য পৌঁছে গিয়েছে। যাঁরা এখনও পাননি, তাঁরাও সাহায্য পাবেন।’’

এর মধ্যেই আবার কনট্যাক্টলেস ডাইনিংয়ের পথে হাঁটার ঘোষণা করেছে একাধিক সংস্থা। যেখানে রেস্তরাঁয় গিয়ে টেবিলে রাখা কিউআর কোড স্ক্যান করেই মেনু দেখা যাবে ও অর্ডার দেওয়া যাবে। বিলও মেটানো যাবে মোবাইল থেকে। খাবার পরিবেশন করার সময় ছাড়া হোটেলকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও ব্যাপার নেই। লকডাউন পরবর্তী সময়ে গ্রাহকদের নিরাপত্তা এবং ব্যবসা রক্ষার এটাই বড় পথ হতে পারে বলে মনে করছে অনলাইনে খাবার আনানোর সংস্থাগুলি।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Food Delivery Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE