Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ম্যাটিসের ইস্তফায় মার্কিন মুলুকে ‘বন্ধু’ হারাল দিল্লি!

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে বরাবরই ভারতের প্রতি নারাজ আমেরিকা। রাশিয়ার অস্ত্র কিনলে কী শাস্তি দেওয়া হবে, সে জন্য বিশেষ আইনও আনে ট্রাম্পের প্রশাসন। কিন্তু ভারতকে যাতে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা যায়, তা নিয়েই গত ২০ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে চিঠি লেখেন ম্যাটিস।

জেমস ম্যাটিস।—ছবি এএফপি

জেমস ম্যাটিস।—ছবি এএফপি

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৬
Share: Save:

আমেরিকার নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের অভিযোগ ঘিরে তখন ফুঁসছে মার্কিন কংগ্রেস। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনলেই ‘শাস্তি দিতে’ একঘরে করা হবে সেই দেশকে। ভারতও ছিল সেই তালিকায়। কারণ তত দিনে, এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে ফেলেছে নয়াদিল্লি। এবং ওয়াশিংটনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিজে ভারতে এসে সেই চুক্তিতে সই করেছেন। হোয়াইট হাউস সূত্রে খবর, সেই সময়ে ভারতের হয়ে ট্রাম্পের কাছে সওয়াল করেন জেমস ম্যাটিস। বৃহস্পতিবার প্রতিরক্ষা সচিবের পদ থেকে তাঁর ইস্তফা ঘোষণার পরে মনে করা হচ্ছে, মার্কিন প্রশাসনের অন্দরে ভারতের হয়ে কথা বলার মতো জোরালো সুর আর তেমন রইল না।

রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে বরাবরই ভারতের প্রতি নারাজ আমেরিকা। রাশিয়ার অস্ত্র কিনলে কী শাস্তি দেওয়া হবে, সে জন্য বিশেষ আইনও আনে ট্রাম্পের প্রশাসন। কিন্তু ভারতকে যাতে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা যায়, তা নিয়েই গত ২০ জুলাই মার্কিন কংগ্রেসে চিঠি লেখেন ম্যাটিস। ট্রাম্পের বিদেশ নীতিকেই কার্যত প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে সেই চিঠিতে ম্যাটিস লিখেছিলেন, ‘‘আমরা কি আমাদের সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরালো করব, নাকি এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করব, যাতে রাশিয়ার দিকে ঝোঁকা ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় না থাকে? এই মৌলিক প্রশ্নটা আমাদের নিজেদেরকেই করতে হবে।’’

ম্যাটিসই ট্রাম্প প্রশাসনের একমাত্র সচিব, যিনি দু’বার ভারত সফরে এসেছিলেন। গত বছর সেপ্টেম্বরে এক দ্বিপাক্ষিক সফরে এবং চলতি বছর সেপ্টেম্বরে ভারত-মার্কিন ২+২ বৈঠকে যোগ দিতে। ট্রাম্প সিরিয়া থেকে সেনা সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই, বৃহস্পতিবার ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন ম্যাটিস। প্রেসিডেন্টকে স্পষ্ট জানান— মতের মিল হচ্ছে না।

কূটনীতিকেরা অবশ্য মনে করাচ্ছেন, সব সময় ট্রাম্পের সঙ্গে মত না মিললেও ম্যাটিস বরাবর ভারতের পাশেই থেকেছেন। ভারত আমেরিকাকে বুঝিয়েছিল, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থেই রাশিয়া থেকে এস-৪০০ কেনা প্রয়োজন। কূটনীতিকেরা মনে করছেন, নিমরাজি হলেও ম্যাটিসের পরামর্শেই ভারতের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিল আমেরিকা।

তার পর নয়াদিল্লি যখন আফগানিস্তানে সেনা না-পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তখনও এই ম্যাটিসই ভারতকে আশ্বস্ত করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, মার্কিন সেনা তো আছেই। অতএব, চিন্তার কিছু নেই। এখন অবশ্য সিরিয়ার পরে আফগানিস্তান থেকেও সেনা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফেব্রুয়ারির পরে আর অফিসে আসবেন না ম্যাটিসও।

চলতি মাসের গোড়ায় আমেরিকা সফরে যান ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই সময়ে রুশ অস্ত্র কেনাকে কেন্দ্র করে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয় ম্যাটিসকে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমরা সব সমস্যার সমাধান করে দেব। আমার উপর আস্থা রাখুন।’’ ম্যাটিসের হঠাৎ ইস্তফা ঘোষণায় ভারত এই আশ্বাসের সুরটিই হারাল বলে মনে করছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE