Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

সাত মাসেও ভাইরাসের প্রকৃত চরিত্র অজানাই?

বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, ভাইরাস সম্পর্কে বেশ কয়েকটি জিনিস জানা গে‌লেও এখনও অনেক জিনিসই অজানা রয়ে গিয়েছে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে সাত মাস অতিক্রান্ত। তার পরেও সংক্রমণের গতি থামা তো দূরের কথা, পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের অন্য রাজ্যে এর রেখচিত্র ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রকৃত চরিত্র এখনও সম্পূর্ণ ‘ডিকোড’ করা যায়নি? সারা বিশ্বে এই ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হলেও কোথাও কি মূল সূত্র অধরা থেকে যাচ্ছে? যে কারণে সংক্রমণের গতি থামানো সম্ভব হচ্ছে না?

বিজ্ঞানী-গবেষকদের একাংশের বক্তব্য, ভাইরাস সম্পর্কে বেশ কয়েকটি জিনিস জানা গে‌লেও এখনও অনেক জিনিসই অজানা রয়ে গিয়েছে। যেমন, সংক্রমণের ধরন কারও ক্ষেত্রে মৃদু (মাইল্ড), কারও ক্ষেত্রে মাঝারি (মডারেট) বা কোনও ব্যক্তির ক্ষেত্রে সঙ্কটজনক (ক্রিটিক্যাল) কেন হচ্ছে, কেন ভৌগোলিকগত ভাবে একটি অংশই সংক্রমিত হচ্ছে, অন্য অংশ তেমন ভাবে হচ্ছে না, এ সব নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চলছে। তবে তাঁরা এও জানাচ্ছেন, যে কোনও সংক্রমণের একটি নিজস্ব বৃত্ত থাকে।

কোভিড-১৯ ভাইরাসও সেই বৃত্তের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এর (আইসিএমআর) প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল নির্মল গঙ্গোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই সংক্রমণ শুরু হয়েছিল বড় মেট্রোপলিটন শহরগুলি থেকে। তার পরে তা মাঝারি-ছোট শহরগুলিতে ছড়িয়েছে। সেখান থেকে ছড়িয়েছে গ্রামীণ ভারতে। যেহেতু ভাইরাসটি একবারে নতুন, তাই সিংহভাগ মানুষের শরীরে এর বিরুদ্ধে কোনও প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। তার উপরে ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হওয়ায় সংক্রমণের গতি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্মলবাবুর কথায়, ‘‘সংক্রমণের বৃত্ত সম্পূর্ণ হতে কমপক্ষে দেড় থেকে দু’বছর সময় লাগে। তবে প্রতিষেধক নিয়ে

গবেষণা চলছে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধের কার্যকারিতাও দেখা হচ্ছে। ফলে সংক্রমণের গতি থামানো যাবে বলেই বিশ্বাস।’’

গবেষকদের একটি অংশ জানাচ্ছেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কে সমাজের এক শ্রেণির মানুষের ভুল ধারণাও সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ভুল ধারণাটি হল, অনেকের কাছেই এই সংক্রমণ শহুরে সমস্যা। ফলে গ্রামীণ এ‌লাকায় সংক্রমণ কোন পর্যায়ে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) এক গবেষক জানাচ্ছেন, এটা ঠিক যে এই সংক্রমণের উৎস শহর। কিন্তু এখন শুধুই শহরে সীমাবদ্ধ নেই। গ্রামেও সমান ভাবে ছড়িয়েছে। লকডাউন ওঠার পরে মানুষ কর্মসূত্রে গ্রাম থেকে যখন ফের শহরে আসছেন, তখন সংক্রমণের গতি বাড়ারও আশঙ্কা থাকছে। ওই গবেষকের কথায়, ‘‘ফলে গ্রামীণ এলাকাতেও ঠিক পদ্ধতিতে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং সমান গুরুত্বপূর্ণ। শুধু শহরের ক্ষেত্রেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে জোর দিলে হবে না।’’

এমনিতেই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিংয়ে যে খামতি রয়েছে, তা এত দিনে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকদের একটি অংশ। এক গবেষকের কথায়, ‘‘শুধু কোভিড ১৯-এর ক্ষেত্রে নয়, এ দেশে যে কোনও সংক্রমণের উৎস খোঁজার প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ও পরিকাঠামোর খামতি রয়েছে।’’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘সাউথ ইস্ট এশিয়া রিজিয়ন অফিস’-এর কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর রাজেশ ভাটিয়া আবার জানাচ্ছেন, ভাইরাসটি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা গেলেও এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়ে গিয়েছে। ভাইরাসটি কী ভাবে ছড়ায়, কী ভাবে কো-মর্বিডিটি থাকলে সেটি বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, এমন অনেক কিছু জা‌না গিয়েছে এত দিনে। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু ভাইরাসটির উৎস কোথায়, গোষ্ঠী প্রতিরোধ ক্ষমতা না কি প্রতিষেধকের মাধ্যমে এর

বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব কিংবা কোন ওষুধে ভাইরাসকে কাবু করা যাচ্ছে, এমন অনেক কিছুই এখনও অজানা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE