Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

মানুষকে ঘরে রাখতে রাস্তায় সংখ্যালঘু মহিলারা

কেন মাস্ক নেই তা নিয়ে প্রশ্ন করায় ওই ছেলেমেয়েরা জানিয়েছিল, তাদের মাস্ক কেনার পয়সা নেই।

দেগঙ্গায় ‘খাদ্য এটিএম’ থেকে ত্রাণ নিচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

দেগঙ্গায় ‘খাদ্য এটিএম’ থেকে ত্রাণ নিচ্ছেন স্থানীয় মহিলারা। ছবি: সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২০ ০২:৪৬
Share: Save:

করোনার পরিস্থিতিতে এক দিকে সংক্রমণ রোখা, অন্য দিকে ত্রাণ বিলি— দুই কাজেই কোমর বেঁধে নেমেছেন সংখ্যালঘু পরিবারের মহিলারা। কেউ ঘরে বসে কাপড় কেটে, সেলাই করে মাস্ক তৈরি করছেন। তার পরে সেই মাস্ক বিলি করছেন বিভিন্ন এলাকায়। পরিবারের পুরুষেরাও তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

লকডাউনের মধ্যে মুখে মাস্ক না পরে বেরিয়েছিল এলাকার কিছু গরিব পরিবারের ছেলেমেয়ে।

কেন মাস্ক নেই তা নিয়ে প্রশ্ন করায় ওই ছেলেমেয়েরা জানিয়েছিল, তাদের মাস্ক কেনার পয়সা নেই। তার পর থেকেই দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার গৃহবধূ জাহানারা বিবি ঠিক করেন, নিজেই কাপড়ের মাস্ক তৈরি করে গরিবদের মধ্যে বিলি করবেন। সেই মতো সংসারের কাজের ফাঁকেই মাস্ক তৈরি করে তা এলাকায় এলাকায় বিলি করছেন জাহানারা। সেই কাজে তাঁকে সাহায্য করছেন স্বামী জাকির হোসেনও।

জাহানারা বলেন, ‘‘শহর, গ্রামের অনেক মানুষ এখনও সচেতন হননি। কারও আবার মাস্ক কেনার পয়সা নেই। সেই সব বাড়ি গিয়ে মাস্ক বিলি করছি। করোনার সংক্রমণ এড়াতে তাঁদের ঘরে থাকতে বলছি। বিশেষ প্রয়োজনে হলে মাস্ক পরেই তাঁদের বাড়ির বাইরে বার হওয়ার গুরুত্বও বোঝাচ্ছি।’’ বারাসত-হাসনাবাদ শাখার লেবুতলা স্টেশন সংলগ্ন ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় দেখা গেল, রেবেকা, হীরা, মানসুরার মতো সাধারণ মুসলিম পরিবারের মহিলারা বাড়ি বাড়ি মাস্ক বিলি করছেন। এর পাশাপাশি ছোট জাগুলিয়া, দত্তপুকুর, গোলাবাড়ি এলাকায়ও সংখ্যালঘু মহিলারা নিজের হাতে মাস্ক তৈরি করছেন। কেউ আবার বিলি করার পরে কিছু মাস্ক বিক্রিও করছেন।

আরও পড়ুন: করোনার হানা চন্দননগরেও

দেগঙ্গার হাদিপুরের গড়পাড়ায় আবার দেখা গেল অন্য চিত্র। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মহিলারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষদের বোঝাচ্ছেন। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আমডাঙায় হাটে-বাজারে ভিড় জমছিল। চায়ের দোকানে চলছিল আড্ডা। সে সব জায়গায় গিয়েও জমায়েতকারীদের সতর্ক করতে দেখা গেল ওই মহিলাদের। করোনার সংক্রমণ রোখার পাশাপাশি গরিব মানুষদের খাবার জোগাতেও পথে নেমেছেন সংখ্যালঘু মহিলারা। আবার দেগঙ্গা থানা এলাকায় রেশমা তরফদার নামে এক কলেজছাত্রীকে দেখা গেল এলাকায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে বিনা প্রয়োজনে কাউকে বাড়ি থেকে না বেরোতে অনুরোধ করছেন।

দেগঙ্গা এলাকায় অসুবিধায় পড়া মানুষদের সাহায্য করতে অভিনব ‘খাদ্য এটিএম’ যন্ত্র তৈরি করেছেন হাসানুজ্জামান চৌধুরী নামে ওই এলাকার নুরনগরের বাসিন্দা এক যুবক। যন্ত্রটির নীচে লেখা, ‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।’ ওই যন্ত্রের উপরের দিকে ছিদ্র রয়েছে। এলাকার দুঃস্থদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে সুভাষচন্দ্রের ছবি-সহ অ্যালুমিনিয়ামের টোকেন। এটিএমের ধাঁচে সেই টোকেন ছিদ্রে ফেললেই দু’টি প্যাকেটে বেরিয়ে আসছে চাল, আলু পেঁয়াজ, সয়াবিন, নুন ও তেল। হাসানুজ্জামান বলেন, ‘‘যত দিন পারছি এ ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করব।’’ শাসনের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছেন আকবর, রাজু, রহিমের পাশাপাশি অনেক স্থানীয় যুবকই।

আরও পড়ুন: কাপড়ের মাস্ক তৈরিতে হাত স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মেয়েদের

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CoronaVirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE