রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
সঙ্ঘাত থামার লক্ষণ নেই। শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ১৩ পৃষ্ঠার চিঠি পাওয়ার অল্প ক্ষণের মধ্যেই টুইটারে পাল্টা আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যপাল। সোমবার তিনি ফের চিঠি পাঠালেন মুখ্যমন্ত্রীকে। গত কয়েক দিনে রাজ্যে করোনা পরিস্থিতির সাংঘাতিক অবনতি হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্য এক ‘ভয়ঙ্করতম’ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বলেও দাবি করলেন। রেশন দুর্নীতি, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ এবং পশ্চিমবঙ্গে ‘পুলিশ-রাজ’ কায়েম করার অভিযোগ তুললেন। ‘ক্রমশ বিরক্তিকর’ হয়ে উঠছে রাজ্যপালের কথাবার্তা, পাল্টা বললেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীকে যে চিঠি ধনখড় পাঠিয়েছেন, তা আগেরটার মতো দীর্ঘ নয়। ২৪ এপ্রিল যে চিঠি রাজ্যপাল দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে, সেটি ছিল ১৪ পৃষ্ঠার চিঠি। আর এ দিন পাঠিয়েছেন ৪ পৃষ্ঠার চিঠি। তবে চিঠির একেবারে শুরু থেকেই রাজ্য সরকারের স্পষ্ট সমালোচনা শুরু করেছেন তিনি।
তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর শেষ বার যোগাযোগ যখন হয়েছিল, তার পর থেকে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সঙ্কট দ্রুত বেড়েছে বলে রাজ্যপাল শুরুতেই লিখেছেন। ‘গণবণ্টন ব্যবস্থার রাজনৈতিকীকরণের’ ফলে রেশন নিয়ে বিক্ষোভ, অশান্তি, হিংসা শুরু হয়েছে বলে রাজ্যপাল অভিযোগ তুলেছেন। এবং সে সবের প্রেক্ষিতেই তিনি বলেছেন যে, ‘‘রাজ্য এক ভয়ঙ্করতম সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।’’
কোভিড-১৯ সংক্রমণে যাঁদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের মৃতদেহ সৎকারের পদ্ধতি নিয়েও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। বিভিন্ন এলাকা থেকে মৃতদেহ যে ভাবে সরানো হচ্ছে, তাকে রাজ্যপাল ‘হৃদয়হীন অবর্ণনীয় অসংবেদনশীলতা’ আখ্যা দিয়েছেন। কোভিডে মৃতদের দেহ কলকাতার যে অঞ্চলে সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, সেখানকার নাম উল্লেখ করে রাজ্যপাল লিখেছেন, ‘‘ধাপার লজ্জা এবং হীন কাহিনি আমরা কখনও ভুলতে পারব না! দীর্ঘ দিন তা আমাদের তাড়া করবে।’’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা জগদীপ ধনখড়ের সেই চিঠি।
আরও পড়ুন: দুর্বল নজরদারি, টেস্ট কম, মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ, রাজ্যকে চিঠি কেন্দ্রীয় দলের
আরও পড়ুন: সবচেয়ে বিপদের ২০-র তালিকায় কলকাতা, নয়া দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে শকুনের তুলনা টেনে যে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন, আগেও তার তীব্র নিন্দা করেছিলেন রাজ্যপাল। এ দিনের চিঠিতে তিনি ফের সে প্রসঙ্গ টেনেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর ওই মন্তব্য কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না বলে লিখেছেন। অন্যায় ভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার অভিযোগ তুলে ধনখড়কে যা লিখেছিলেন মমতা, এ দিন ধনখড় ফের সে প্রসঙ্গ টেনেছেন। কে সংবিধান লঙ্ঘনকারী কার্যকলাপ করেন, কে সরকারের পাশাপাশি সিন্ডিকেট চালান, সে সব পশ্চিমবঙ্গে কারও অজানা নয়— এই রকম আক্রমণাত্মক বাক্যও রয়েছে রাজ্যপালের এ দিনের চিঠিতে।
পশ্চিমবঙ্গ ‘দুর্ভাগ্যজনক’ ভাবে ‘পুলিশ রাজত্বে’ পরিণত হচ্ছে বলে রাজ্যপাল এ দিন লিখেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কিছু লিখলেই তাঁর দরজায় পুলিশ হাজির হয়ে যাচ্ছে, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠস্বরও চেপে দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্যপাল এ দিন লিখেছেন। সাংবাদিকরা আগে কখনও এত চাপের মুখে পড়েননি বলে অভিযোগ করেছেন রাজ্যপাল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এর আগে যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়, তাতে বিধানচন্দ্র রায়ের কথা লিখেছিলেন তিনি। বিধানচন্দ্র রায় আজ থাকলে এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে কাজ করতেন, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভেবে দেখতে বলেছিলেন। বিধানচন্দ্র রায়ের কথা মনে করিয়ে দিলে পরিস্থিতি বদলাবে বলে তিনি আশা করেছিলেন, লিখেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি বলে রাজ্যপাল মনে করছেন। তাই এ দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃত করেছেন তিনি। ধনখড় লিখেছেন, ‘‘গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময় এখন: ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির।’ বোঝা যায় আপনি গুরুদেবের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কত দূরে রয়েছেন।’’
এ দিনের চিঠি রাজ্যপাল শেষ করেছেন গীতার শ্লোক দিয়ে। ‘কর্মণ্যেবাধিকারস্তে মা ফলেষু কদাচন...’, এই শ্লোকটি উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যপালের পরামর্শ— আপনার জন্য যে কর্তব্য নির্দিষ্ট, তা পালন করে যান ফলের আশা না করে।
রাজ্যপালের এই চিঠি প্রসঙ্গে বিরক্তি প্রকাশ করেছে তৃণমূল। দলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘বিষয়টা ক্রমশ বিরক্তিকর হয়ে উঠছে। আমরা এর প্রতিক্রিয়া দিতে চাই না। রাজ্যপাল তাঁর কাজ করতে থাকুন। আমরা আমাদের কাজ করতে থাকব।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy