গ্রাফিক্স শৌভিক দেবনাথ।
আইপিএস অফিসার গ্রেফতার হতেই ফের গরম বাংলার রাজনীতি। এসএমএইচ মির্জার বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের পদক্ষেপকে সমর্থন করল সব ক’টি বিরোধী দল। রাজ্য বিজেপির সভাপতি এক ধাপ এগিয়ে বললেন, ‘‘আরও আগে হলে ভাল হত।’’ কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাইল না রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। আর যাঁর হয়ে মির্জা টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, সেই মুকুল রায় বললেন, ‘‘আমি টাকা নিয়েছি, এমন ছবি কোথাও নেই।’’
পুলিশকর্তা এসএমএইচ মির্জা নারদ-কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত। যে ভিডিয়ো নারদ নিউজ প্রকাশ করেছিল, তাতে আরও অনেকের মতো মির্জাকেও টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করে।
নারদ কাণ্ডে এটিই প্রথম গ্রেফতারি। ২০১৬ সালে যে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছিল, তার তদন্তে নেমে প্রথম গ্রেফতারি ২০১৯ সালে— এটা আসলে অনেক দেরি, মত রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষের। তাঁর কথায়, ‘‘এত বছর লেগে গেল! আরও আগে হলে মানুষের বিশ্বাস বাড়ত। সত্য তাড়াতাড়ি উদঘাটন হোক।’’ দিলীপ আরও বলেন, ‘‘এই পুলিশকর্তা নাকি বলেছিলেন, পার্টির জন্য টাকা তুলে দিতে হয়। ভাবা যায়! এ রাজ্যে যে ধরনের দুর্নীতি হয়েছে, যে ভাবে মানুষের টাকা গিয়েছে, দোষীদের সবার সাজা পাওয়া উচিত।’’
আরও পড়ুন: ‘ছাড়পত্র দিয়েছিল ভারতই’, মেহুলকে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মন্তব্য অ্যান্টিগার প্রধানমন্ত্রী
দিলীপ ঘোষের এই মন্তব্যকে কিন্তু বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখছে রাজনৈতিক শিবির। নারদ-কাণ্ডে এসএমএইচ মির্জার নাম কিন্তু জড়িয়েছিল মুকুল রায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে। নারদ নিউজের প্রকাশ করা ভিডিয়োয় তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে দেখা গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু টাকা নিতে দেখা যায়নি। মির্জাকে দেখা গিয়েছিল টাকা নিতে, মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই নিজের পরিচয় দিতেও শোনা গিয়েছিল তাঁকে। তাই স্বাভাবিক কারণেই মুকুলের নামও উঠে এসেছে চর্চায়। সে প্রসঙ্গে মুকুল এ দিন বলে, ‘‘সিবিআই যা ব্যবস্থা নিতে চায় নিক। আমার কাছে কেউ টাকা অফার করতে আসেনি, ব্যবসা করবে বলে এসেছিল। আমি টাকা নিয়েছি, এমন ছবি কোথাও নেই।’’
যখন নারদ-কাণ্ডে তাঁর নাম জড়িয়েছিল, মুকুল তখন তৃণমূলে ছিলেন। এখন মুকুল বিজেপিতে। এই পরিস্থিতিতে সিবিআই কি তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে? মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমি চাই সত্য উদঘাটন হোক। এজেন্সি কী করবে, সেটা আমি বলতে পারব না, কারণ সেটা কারও ধারণার উপরে নির্ভর করে না।’’ মির্জা গ্রেফতার হওয়ার পরে শোনা যাচ্ছে যে, এক বিজেপি নেতার মুখোমুখি বসিয়ে মির্জাকে জেরা করা হতে পারে। সে প্রসঙ্গে মুকুল রায় বলেন, ‘‘আমি জানি না। তবে তদন্তের স্বার্থে যদি কাউকে ডাকে, তা হলে আইন মেনে চলা নাগরিক হিসেবে তাঁর যাওয়া উচিত।’’
মির্জা যে হেতু তৃণমূলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ পুলিশকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সে হেতু তাঁর গ্রেফতারিতে বামেদের প্রতিক্রিয়াও অনেকটা বিজেপির মতোই। আইনজীবী তথা সিপিএম নেতা বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আইনি পদ্ধতিতে এটাই সঠিক প্রক্রিয়া। দুর্নীতি উন্মোচনের স্বার্থে সব অভিযুক্তকেই গ্রেফতার করা প্রয়োজন।’’ দিলীপ ঘোষের মতো বিকাশও বলেন, ‘‘আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কেন করা হয়নি, সেটাই প্রশ্ন।’’
বছরখানেকের কিছুটা বেশি সময় ধরে কিন্তু সাসপেন্ড হয়ে রয়েছেন মির্জা। চাকরি যায়নি। তবে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছে। এ বার নারদ কাণ্ডের তদন্তে তিনি গ্রেফতার হয়ে গেলেন সিবিআইয়ের হাতে।
আরও পড়ুন: নারদ-কাণ্ডে প্রথম গ্রেফতার, সোমবার পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে পুলিশ কর্তা এসএমএইচ মির্জা
সারদা-কাণ্ডের তদন্তে সিবিআই যখন রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দিয়েছিল, তখন যে প্রতিক্রিয়া রাজ্য সরকার তথা শাসক দলের তরফে দেখানো হয়েছিল, মির্জার গ্রেফতারিতে কিন্তু সেই প্রতিক্রিয়া অমিল। এ প্রসঙ্গে সরকারের তরফে কোনও কথা খরচ করা হয়নি। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় শুধু বলেন, ‘‘কে কোথায় গ্রেফতার হল, তা নিয়ে আমি কেন মন্তব্য করতে যাব?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy