বুধবারের বৈঠকে রোগী প্রত্যাখ্যান-সহ নানা অভিযোগ শুনলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ঘরের সমস্যার সমাধানে দাওয়াই— ‘ইনসেন্টিভ’, আর বেসরকারি স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নজরদারি। রাজ্যে প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার মাসতিনেক পরে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আপাতত এই লক্ষ্যেই এগোতে চাইছে নবান্ন। বুধবার সাতটি চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের নির্যাস অন্তত সেরকমই।এ দিন রাজ্যে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৯১ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫০৫ জন। সুস্থ হওয়ার হার ৫০.৬১ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৩.১১ শতাংশ।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, করোনা মোকাবিলায় সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে যে সব সমস্যা এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলির সমাধানের পথ প্রশস্ত করতে এ দিনের বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সম্প্রতি সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড হাসপাতালে পরিণত করার সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা হয় স্বাস্থ্য ভবনের। এর আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত রূপায়ণের প্রক্রিয়া মসৃণ হয়নি। পাশাপাশি, কোয়রান্টিন নীতি মেনে কোভিডের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর জোগানেও সমস্যা হচ্ছে। সেই সকল সমস্যার সমাধানে স্বাস্থ্য ভবন যে পরিকল্পনা করেছিল, তাতে আইএমএ’র রাজ্য সম্পাদক শান্তনু সেন-সহ চিকিৎসক সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সিলমোহর পড়ল।
সাগর দত্তে জুনিয়র চিকিৎসকদের বিভোক্ষের মূল বক্তব্য ছিল, মেডিক্যাল কলেজ কোভিড হাসপাতাল হলে বাকি বিভাগের চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের পঠনের কী হবে? মেডিক্যাল কলেজগুলি কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত হলেও সেখানে অন্য বিভাগের চিকিৎসা হবে বলে এ দিন বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সরকারি পরিষেবায় চিকিৎসকের ঘাটতি মেটাতে স্নাতকোত্তর স্তরের (পিজিটি) চিকিৎসকদের পোস্ট ডক্টরালের জন্য ১০ শতাংশ ‘ইনসেন্টিভ’ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। হাউসস্টাফের সংখ্যা ১২০০-১৮০০ এবং অন্য বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্টদের কোভিডের চিকিৎসায় যুক্ত করা হবে। ইন্টার্নেরা সম্মত হলে এক বছরে ইন্টার্নশিপের মধ্যে এক-দু’মাস করোনা চিকিৎসায় যুক্ত থাকবেন। এমবিবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের সিনিয়রদের সহযোগী হিসেবে যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি পরিষেবায় তিন বছর বন্ডের চিকিৎসকেরা যত দিন করোনা চিকিৎসায় যুক্ত থাকবেন, তাঁদের বন্ডের মেয়াদ থেকে তত দিন কমবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘এই সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতভাবে নেওয়া হয়েছে। আমরা কিছু চাপিয়ে দিইনি।’’
আরও পড়ুন: করোনা-মুক্ত হয়েই ফল বিক্রি করছেন সুমন
চিকিৎসক সংগঠনগুলি সূত্রে খবর, দু’ঘণ্টার বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালের করোনা-পর্যালোচনা প্রসঙ্গ উঠতে শয্যা বৃদ্ধির বিষয়টিও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে করোনা চিকিৎসায় মাত্রাতিরিক্ত বিল, রোগী প্রত্যাখ্যান-সহ যে সকল অভিযোগ শোনা গিয়েছে, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রী পরে বলেন, ‘‘প্রাইভেট হাসপাতালগুলিকে বলব, দয়া করে অন্য রোগীদেরও চিকিৎসা করুন। ফিরিয়ে দেবেন না। কোনও মুমূর্ষু রোগী গেলে আগে তাঁকে স্থিতিশীল করুন। নমুনা পরীক্ষার অপেক্ষায় মুমূর্ষু রোগীকে ফেলে রাখা হচ্ছে।’’ এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করতে আজ, বৃহস্পতিবার বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা। শয্যা-সঙ্কট প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামিদিনে কোন হাসপাতালে কত শয্যা খালি রয়েছে, তা প্রতি ঘণ্টায় আপডেট করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি, দু’ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের জন্য এই ‘আপডেট’ থাকবে।
‘ডক্টরস ফর পেশেন্টসের’ তরফে চিকিৎসক শারদ্বত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কলকাতার অন্তত চার-পাঁচটি বেসরকারি হাসপাতাল জুনিয়র চিকিৎসকদের বেতন কমিয়ে দিয়েছে। এটা হওয়া উচিত নয়। কোভিডের আতঙ্কে অনেক ক্ষেত্রে রোগী ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। পিপিই’র দামে কোনও ভারসাম্য নেই। এগুলি ঠিক নয়।’’
নমুনা পরীক্ষা নিয়েও চিকিৎসক সংগঠনগুলির তরফে একগুচ্ছ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের তরফে চিকিৎসক মানস গুমটা জানান, শুধু সংখ্যা বাড়ালে হবে না। কাদের টেস্ট করা হচ্ছে, সেটা দেখাও জরুরি। নন-করোনা রোগীদের চিকিৎসা, করোনা রোগীদের একঘরে করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সভাপতি অর্জুন দাশগুপ্ত। সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের তরফে সম্পাদক সজল বিশ্বাস জানান, সংক্রমণের বৃদ্ধির নিরিখে যে প্রস্তুতির প্রয়োজন, সরকারের তা এখনও নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy