Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

আমি কিন্তু বলিনি: করোনা-এক্সপ্রেস বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে আবার পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে বিজেপি।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০৩:২৯
Share: Save:

করোনা ও এগ্জ়িট এক্সপ্রেস’ ঘিরে বিতর্কে যোগ হল নয়া মাত্রা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁকে আক্রমণ করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখ খুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করলেন, শ্রমিকদের নিয়ে ফেরা ট্রেনকে তিনি নিজে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলেননি। লোকে যা বলছে, সেটাই তিনি বলেছিলেন। বিজেপি-সহ বিরোধীদের বিরুদ্ধে ‘অবিবেচনামূলক দুরভিসন্ধি’র অভিযোগ এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপির ‘ভার্চুয়াল সভা’ থেকে মঙ্গলবার শাহ বলেছিলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ঘরে ফিরতে চেয়েছিলেন। আমরা সেই ট্রেনের নাম দিয়েছি ‘শ্রমিক স্পেশাল’। আর মমতাদিদি নাম দিয়েছেন ‘করোনা এক্সপ্রেস’। ওই করোনা এক্সপ্রেসই বাংলা থেকে তৃণমূলের ‘এগ্‌জ়িট এক্সপ্রেস’ হবে! আপনি বাঙালি শ্রমিকদের ক্ষতে যে নুন দিয়েছেন, তা তাঁরা ভুলবেন না!’’

এই সূত্রেই বুধবার মমতা বলেন, ‘‘ট্রেন সার্ভিসটা বন্ধ আছে একটাই কারণে, একসঙ্গে অনেক লোক চেপে গেলে সেখানে ছোঁয়াছুঁয়িতে করোনা বাড়তে পারে। যার জন্যই আমরা বলছিলাম একসঙ্গে হাজার হাজার লোক না পাঠাতে। আপনারা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। আমি কিন্তু কোনও দিন ‘করোনা এক্সপ্রেস’ বলিনি, পাবলিক বলেছে। আমি সেই কথাটা বলেছি।’’ কেন লোকে এমন বলছে, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিজেপির বড্ড মাথাব্যথা! শ্রমিকদের জন্য কোন সহানুভূতির কাজটা করেছেন? লকডাউনের সময় কেন্দ্র বলেছিল, চট-চা শিল্প-সহ বেসরকারি ক্ষেত্রে ছুটি থাকলেও শ্রমিকদের মাইনে দেবে। নিজেরা বলে পরে তারাই প্রতারিত করেছে শ্রমিক সমাজকে। যারা দিন আনে দিন খায়, তারা কোথায় যাবে?’’

আরও পড়ুন: চিনা সেনা ৮ কিমি ঢুকে বসে আছে? অস্বীকারও করছে না দিল্লি

মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে আবার পাল্টা আক্রমণে গিয়েছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী আগে বলে নিয়ে পরে ভাবনাচিন্তা করেন, এমনই কটাক্ষ করেছে তারা। শাহের সভার পরে তাঁর উদ্দেশে তোপ দাগলেও এই প্রশ্নে বাকি দুই বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস কাঠগড়ায় তুলেছে মুখ্যমন্ত্রীকেই। তাদেরও দাবি, ‘করোনা এক্সপ্রেস’ কথাটা তাঁর মুখেই যে শোনা গিয়েছিল, তা অস্বীকার করার জায়গা নেই।

নবান্নে গত মাসের শেষে রেল মন্ত্রকের সমালোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছিলেন, তার ভিডিয়ো ক্লিপ ও প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন ‘করোনা এক্সপ্রেস’ চালানো হচ্ছে কি না? তাঁর বক্তব্য ছিল, ‘‘বাড়তি ট্রেন দিক না রেল মন্ত্রক! আপনার উচিত শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা। লকডাউন ঘোষণা করলেন, এক দিনে গাদাগাদা ট্রেনে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় উঠিয়ে দিচ্ছেন। লোকগুলোকে জল-খাবার দিচ্ছেন না। লোকগুলো না খেতে পেয়ে ট্রেনেও অনেক সময়ে মারা যাচ্ছে। তার মানে কি আপনারা শ্রমিক এক্সপ্রেসের নামে করোনা এক্সপ্রেস করতে চান? করোনা এক্সপ্রেস চালাচ্ছেন?’’ তাঁর আরও মন্তব্য ছিল, ‘‘খড়ের গাদার মতো আনছেন। যার ছিল না, তাকেও করোনা দিচ্ছেন!’’

আরও পড়ুন: শরীরে তৈরি হচ্ছে করোনার অ্যান্টিবডি, দেশে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা এখন বেশি

শাহের নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন মুখ খোলার পরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘দেশ জুড়ে ‘করোনা এক্সপ্রেস’ কথাটা নিয়ে চর্চা হচ্ছে উনি বলেছেন বলেই। যে-ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টা বললেন, দিদিমণি এ বার বলতে শুরু করলেন আমি বলিনি! তাঁর সরকারের অডিট কমিটি নিয়ে বিতর্ক হওয়ার পরে বলেছিলেন, তিনি জানতেন না কমিটির কথা। এ ভাবেই তো চলছে! সরকার ভূতে চালাচ্ছে কি না, কে জানে! মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’

বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘শাহ বলার পরে তৃণমূল নেতারা যে অত প্রতিক্রিয়া দিলেন মঙ্গলবার, তখন তো এই কথাটা বলেননি! তা হলে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কী বলেছিলেন, তাঁর দলের নেতারাও কি জানতেন না? মুখ্যমন্ত্রী বলতে পারতেন শ্রমিকদের তিনি আঘাত করতে চাননি। কিন্তু বিপদে পড়লেই দায় ঝেড়ে ফেলেন।’’ প্রদেশ কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রেরও মন্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর মুখে কথা বসিয়ে দেওয়ার সুযোগ তো নেই। রেকর্ড আছে। করোনা এক্সপ্রেস কথাটা ওঁর মুখে শোনা গিয়েছিল। করোনাকে পাশবালিশ করে ঘুমোতেও বলেছিলেন। এখন সেই অবস্থাই হয়েছে। অস্বীকার করে কী হবে?’’ তৃণমূলের তরফে এ দিন অবশ্য কেউ আর এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।

ট্রেনের ‘নামকরণ’ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেও পরিযায়ীদের দুর্ভোগের পিছনে এ দিনও কেন্দ্রের অপরিকল্পনাকেই দায়ী করেছেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, লকডাউন কার্যকর করার তিন বা সাত দিন আগে থেকে শ্রমিক এক্সপ্রেস চালিয়ে সকলকে বাড়ি পৌঁছে দিলে দুর্ভোগ হত না। এ রাজ্য থেকে কেউ ফিরে যেতে চাইছেন না কারণ, এখানে তাঁদের জন্য সুবন্দোবস্ত রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘দিনের পর দিন মহারাষ্ট্র, চেন্নাই, গুজরাতের মানুষদের কেন সমস্যা হল? পুলিশের মারও খেয়েছে। দিল্লিতেও সমস্যা হয়েছে, কত মারপিট, দাঙ্গা, খুন। পাঁচের জায়গায় ১০ বার ট্রেন চালালে কী ক্ষতি হত? এটাই তো বিজেপি দলের প্রচার ছিল, যে একসঙ্গে অত লোক ধর্মীয় স্থানে কেন গেল? আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। সেটা যদি অন্যায় হয়ে থাকে, তা হলে আপনি কেন সেই অন্যায়টা করলেন? ভাল লোকগুলোকে বিপদে ফেললেন? কেউ আজ ভুগছে, কাউকে হয়ত আগামী কাল ভুগতে হতে পারে!’’ মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য, ইতিমধ্যেই ১১ লক্ষ মানুষ ফিরে এসেছেন। কয়েক দিনের মধ্যে ২২টা ট্রেনে আরও ৩০ হাজার মানুষ আসবেন।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, স্টেশনে পরীক্ষা করানোর বাড়তি কষ্ট লাঘব করতে পরিযায়ীদের লালারসের নমুনা সেখানে সংগ্রহ করা হচ্ছে না। প্রাতিষ্ঠানিক নিভৃতবাসের মেয়াদও ১৪ দিনের বদলে ৭ দিন করা হয়েছে। তবে প্রত্যেকের স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যাপারে সরকার বাড়তি জোর দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা বেশি করে করছি, কারণ আগামী দিন যাতে ভুগতে না হয়। তাতে সংখ্যাটা হয়ত বাড়বে, ভয় পাওয়ার কারণ নেই। মানুষও জানতে পারবে, নীরবে সংক্রমণ হয়েছে কি না। তা হলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। নিজেদের সাবধান থাকতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE