প্রতীকী ছবি
প্রতিবেশীর করোনা হয়েছে, এই ধারণার বশবর্তী হয়ে তাঁর পরিবারকে কার্যত ব্রাত্য করে রাখার অপচেষ্টা কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এ বার তেমনই ঘটল শ্রীরামপুরে। হাওড়া আদালতে কর্মরত সত্তরোর্ধ্ব এক আইনজীবীর পরিবারের অভিযোগ, এই গুজবে তাঁদের বাড়ির গলি থেকে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন স্থানীয় পুরসভার সাফাইকর্মীরা। এমনকি তাঁদের বাড়িতে যে দু’জন পরিচারিকা রান্না এবং অন্য কাজে আসতেন, তাঁরাও আর কাজে আসতে চাইছেন না।
দিলীপ দাস নামে ওই আইনজীবীর ছেলে শৌনকের অভিযোগ, বাজারে-ব্যাঙ্কে সর্বত্র তাঁকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আত্মীয়-বন্ধুরা ফোন করে খোঁজ নিতে শুরু করেছেন। পুরসভার এক প্রতিনিধিও সোমবার পিপিই পরে এসে খবর নিয়ে গিয়েছেন দিলীপবাবুর।
শৌনক জানিয়েছেন, বাড়িতে তাঁরা তিন সদস্য— তিনি, তাঁর স্ত্রী ও বাবা। মা মারা গিয়েছেন। ওই দম্পতি কাজ করেন বেসরকারি সংস্থায়। ঘটনা পরম্পরায় বাধ্য হয়ে সোমবার শ্রীরামপুর পুরসভায় ইমেল করে অভিযোগ জানিয়েছেন শৌনক। জানিয়েছেন, তাঁর বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর শরীরে করোনার কোনও উপসর্গ নেই। সুস্থ রয়েছেন তিনি ও তাঁর স্ত্রীও। শৌনক বলেন, ‘‘বাবা হাওড়া আদালতে নিয়মিত ওকালতি করেন। একদম সুস্থ। শ্রীরামপুর এলাকায় তাঁর পরিচিতিও রয়েছে।’’
ওই যুবকের অভিযোগ, কয়েক দিন আগে তাঁদের বাড়ির কাছে দুই পরিবারের কয়েক জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁদের কেউ কেউ কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি হন। তার পরেই কেউ বা কারা রটিয়ে দেন, ওই এলাকার এক বিশিষ্ট আইনজীবী করোনায় আক্রান্ত। শৌনক জানান, তাঁদের এলাকায় দুই প্রবীণ আইনজীবীর মধ্যে এক জন আগেই মারা গিয়েছেন। ফলে সবার নজর এসে পড়ে তাঁর বাবার উপরে।
সেই রটনাই সম্প্রতি আরও বড় আকার নেয়। ব্যক্তিগত কাজে দিলীপবাবু এক দিন গাড়িতে কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেটা প্রতিবেশীদের নজর এড়ায়নি। শৌনক জানান, তার পর থেকেই তাঁর কাছে ঘন ঘন ফোন আসতে শুরু করেছে। সকলেরই এক প্রশ্ন, ‘উনি কি কোভিড পরীক্ষা করাতে কলকাতায় গিয়েছিলেন? রিপোর্ট কবে পাওয়া যাবে?’ তাঁর অভিযোগ, প্রতিবেশীরা ধরেই নিয়েছেন যে তাঁর বাবার করোনা হয়েছে এবং সে দিন বাবা পরীক্ষা করাতে কলকাতায় গিয়েছিলেন। সম্প্রতি এক শুভানুধ্যায়ী শৌনককে ফোন করে এ-ও জানতে চান, তাঁর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে কি না।
পুরো ঘটনায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই যুবক। জানিয়েছেন, এই গুজবের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। শ্রীরামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান অমিয় মুখোপাধ্যায় বিষয়টি শুনে বলেন, ‘‘মঙ্গলবার আমাদের ছুটি। বুধবার ঘটনাটি খতিয়ে দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy