Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা-ধাক্কা যৌনকর্মীদের সমবায়েও

লকডাউনের জেরে বন্ধ রয়েছে রাজ্যের যৌনপল্লিগুলি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪৩
Share: Save:

নোটবন্দির ধাক্কা কোনও রকমে সামলানো গিয়েছিল। কিন্তু এ বার করোনাভাইরাসের আক্রমণ সরাসরি ধাক্কা দিয়েছে রাজ্যের যৌনকর্মীদের সমবায় ‘ঊষা মাল্টিপারপাস কোঅপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’-এর আর্থিক ভিতে।

লকডাউনের জেরে বন্ধ রয়েছে রাজ্যের যৌনপল্লিগুলি। সোনাগাছি-সহ শহর এবং শহরতলির যৌনপল্লিগুলিতে যে দু’টি পণ্য (কন্ডোম এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন) বিক্রি করে থাকে ওই সমবায় সংস্থা, সেই পণ্যগুলির বিক্রিও প্রায় বন্ধের মুখে। তা ছাড়া যৌনকর্মীরা তাঁদের আয়ের একাংশ আমানত হিসেবে ওই সমবায়ে জমা রাখেন। লকডাউনে সে সব কাজও বন্ধ রয়েছে। ফলে করোনা আবহে ওই সমবায়ের আর্থিক অবস্থা প্রায় ধুঁকছে।

ওই সমবায় সংস্থা সূত্রের খবর, বর্তমানে ওই সংস্থার সদস্য সংখ্যা ৩০ হাজার ৮৩২। প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা আমানত হিসেবে সেখানে জমা দেন যৌনকর্মীরা। অর্থাৎ, মাসে সংস্থার আমানত সংগ্রহের পরিমাণ সাড়ে সাত লক্ষ থেকে ন’লক্ষ টাকা মতো। এ ছাড়া সোশ্যাল মার্কেটিং থেকে আয় হয় প্রায় চার লক্ষ টাকা। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ায় আমানত সংগ্রহ এবং পণ্য বিক্রি থেকে আয়ের পথ প্রায় বন্ধ। সংস্থার অন্যতম উপদেষ্টা স্মরজিৎ জানার কথায়, ‘‘সমবায়ের কাজকর্ম এখন বন্ধ। যৌনকর্মীদের পেশা সঙ্কটে। যৌনপল্লিগুলি বন্ধ। এর প্রভাব পড়েছে আমানত সংগ্রহে।’’

কী ভাবে? ওই সমবায় সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আগে প্রতিদিন গড়ে ১৪ হাজার কন্ডোম বিক্রি করত তারা। দৈনিক স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রির পরিমাণ গড়ে ১,১২০টি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় চার লক্ষ কন্ডোম বিক্রি করে সংস্থার আয় হয়েছিল তিন লক্ষ ৬৭ হাজার টাকা। ওই মাসেই প্রায় চার হাজার স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেট বিক্রি বাবদ আয় হয় এক লক্ষ পাঁচ হাজার টাকা। কিন্তু এর পরের মাস থেকেই করোনা সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে শুরু করে। ফলে কমতে শুরু করে বিক্রির পরিমাণ। মার্চে তিন লক্ষ এক হাজার কন্ডোম বিক্রি বাবদ আয় হয় দু’লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। আর দু’হাজার ৮০০ প্যাকেট স্যানিটারি ন্যাপকিন বিক্রি বাবদ আয়ও কমে হয় মাত্র ৭০ হাজার টাকা। ওই মাসের শেষ দিক থেকে দৈনিক আমানত সংগ্রহের কাজও করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে লকডাউন চলায় সংস্থার সার্বিক আয় কমে গিয়েছে প্রায় ৯৭ শতাংশ।

২০০৮-’০৯ আর্থিক বছর থেকে ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির উত্থান যৌনকর্মীদের সমবায় সংস্থার আর্থিক ভিত অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল। বাড়তি লাভের আশায় যৌনকর্মীরা সে সময়ে আয়ের একটা বড় অংশ ওই সমস্ত ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থায় জমা করতে উৎসাহিত হতেন। পরে আস্তে আস্তে ফের সমবায়ে আস্থা ফিরতে শুরু করে তাঁদের। এর পরে কেন্দ্রের আচমকা নোটবন্দি ঘোষণার অভিঘাতে সংস্থার আমানত সংগ্রহের পরিমাণ কমে যায় অনেকটাই। সেই প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এ বার সমবায়ের ভিতে ধাক্কা দিয়েছে করোনা।

স্মরজিৎবাবু বলেন, ‘‘আয় না হওয়ায় বৌবাজারের যৌনকর্মীদের অনেকেই ঘর ভাড়া দিতে পারছেন না। তাঁরা সমবায়ে আমানত জমা দেবেন কী করে? বাড়িমালিকদের কাছে দু’মাসের ভাড়া মকুব করার অনুরোধ করেছি। সেই অনুরোধ অনেকে রেখেছেন। কেউ কেউ আবার ভাড়া চেয়ে চাপ দিচ্ছেন।’’

আরও পড়ুন: রেড জোন কলকাতার কোন কোন জায়গা অতি স্পর্শকাতর, দেখে নিন

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Sobhabazar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE