Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ভয় উড়িয়ে দল গড়ে জীবাণুমুক্তকরণ শিক্ষকের

নাগেরবাজারের কাজিপাড়ার আর্য বিদ্যামন্দিরের কাছে একটি ফ্ল্যাটে করোনা ধরার পড়ার পরে তখনও ওই বাড়ি সিল করার কাজ বা জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু করেনি প্রশাসন। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে খবর পেয়ে নিজের দল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দেবজিৎ।

সহায়: নাগেরবাজারের একটি বাড়িতে কাজ করছেন দেবজিৎ ও তাঁর সহযোগীরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সহায়: নাগেরবাজারের একটি বাড়িতে কাজ করছেন দেবজিৎ ও তাঁর সহযোগীরা। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০২০ ০২:৩৯
Share: Save:

স্কুল বন্ধ। প্রাথমিক স্কুলে অনলাইন ক্লাসও সে ভাবে হয় না। কিন্তু তা বলে বসে নেই দক্ষিণ দমদম পুরসভা পরিচালিত দক্ষিণদাঁড়ির প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক দেবজিৎ রায়। নিজের উদ্যোগে তৈরি করেছেন একটি দল। যে বাড়িতে করোনা ধরা পড়েছে, সেখানে দলবল নিয়ে পৌঁছে বাড়ি জীবাণুমুক্ত করার কাজ করছেন দেবজিৎ। করোনা বাড়ছে, তাই প্রশাসনের পাশাপাশি দেবজিতের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে জীবাণুমুক্ত করার কাজকে স্বাগত জানিয়েছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভা এলাকার বাসিন্দারাও।

নাগেরবাজারের কাজিপাড়ার আর্য বিদ্যামন্দিরের কাছে একটি ফ্ল্যাটে করোনা ধরার পড়ার পরে তখনও ওই বাড়ি সিল করার কাজ বা জীবাণুমুক্ত করার কাজ শুরু করেনি প্রশাসন। কিন্তু ওই ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে খবর পেয়ে নিজের দল নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন দেবজিৎ। সেই ওই ফ্ল্যাট তাঁরাই জীবাণুমুক্ত করেন।

সেই কাজ চলার সময়েই দেবজিৎ জানালেন, তাঁর দলে আছেন আকাশ বৈদ্য এবং চেতন ঝা নামে দুই যুবক। স্নাতক পাশ করা আকাশ গাড়ি ধোয়ার কাজ করেন। চেতন ঝা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। আকাশ বলেন, ‘‘করোনার জন্য গাড়ি ধোয়ার কাজ বন্ধ। দেবজিৎদা করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করার কথা বলতেই রাজি হয়ে গেলাম।’’ অন্য দিকে চেতন বলেন, ‘‘স্কুল তো ছুটি। তবে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে। ক্লাসের মাঝে সময় পেলেই দাদার সঙ্গে চলে আসছি জীবাণুমুক্ত করার কাজে।’’

নাগেরবাজারের কাজিপাড়ার যে বাড়িতে জীবাণুমুক্ত করার কাজ চলছিল সেখানে পিপিই পরেই কাজ করছিলেন চেতন এবং আকাশ। দেবজিতের দাবি, ‘‘প্রতিটি বাড়িতে কাজের পরেই পিপিই পুড়িয়ে দিই। আমরা তিন জনের দু’জন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সরাসরি জীবাণুমুক্ত করার এই কাজ করি। যখন যে কাজ করানোর দায়িত্বে থাকে, সে আর পিপিই পরে না। বাকি দু’জন পরে।’’

জীবাণুমুক্ত করার জন্য স্প্রে করা, পিপিই কেনা এ সবের জন্য খরচ রয়েছে। দেবজিৎ জানান, কাজের পারিশ্রমিক, এবং পিপিই ও জীবাণুমুক্ত করার স্প্রের খরচের কিছুটা অংশ যে বাড়িতে কাজ হচ্ছে, সেখানকার থেকে তাঁরা নিয়ে থাকেন। কিন্তু সেটা খুবই সামান্য। দেবজিৎ বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের লক্ষ্য সব থেকে বেশি সংখ্যক করোনা আক্রান্তের বাড়িতে বিপদগ্রস্ত মানুষদের পা‌শে পৌঁছে যাওয়া।’’

নাগেরবাজারের যে ফ্ল্যাটে দেবজিতেরা কাজ করছিলেন সেই বাড়ির এক বাসিন্দা আদিত্যশঙ্কর রায় বলেন, ‘‘প্রশাসন থেকে জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতে আসার আগেই এই শিক্ষক তাঁর দল নিয়ে যে ভাবে আমাদের পুরো চারতলা ফ্ল্যাট জীবাণুমুমুক্ত করলেন, তাতে আমরা অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছি।’’ আর এক বাসিন্দা আনন্দশঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এই ভাবে দেবজিতের মতো ব্যক্তিগত উদ্যোগে যদি অনেকে এগিয়ে আসেন তা হলে আখেরে সাধারণ মানুষই উপকৃত হবেন।’’

কী ভাবে খবর পান কোথায় করোনা হয়েছে? দেবজিৎ জানান, দক্ষিণ দমদম পুরসভার স্কুলে শিক্ষকতা করার জন্য পুরসভা সূত্রে বিষয়টি জানতে পারেন। তা ছাড়া দমদম থানাতেও তাঁদের ফোন নম্বর দেওয়া আছে, যাতে কোনও বাড়িতে করোনা আক্রান্ত কেউ আছে জানতে পারলে পুলিশ তাঁদের খবর দিতে পারে। দেবজিৎ বলেন, ‘‘এই ভাবেই গত এক মাস ধরে আমরা বহু বাড়িতেই পৌঁছে গিয়েছি জীবাণুমুক্ত করার কাজ করতে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE