Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

নবান্নে জানাল স্বাস্থ্য ভবন, সংক্রমণ বেশি, তবু পরীক্ষা কম কলকাতায়

স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা পুর এলাকার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে মূলত এসএসকেএম হাসপাতালে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩২
Share: Save:

সংক্রমণের নিরিখে রাজ্যে এখনও শীর্ষে কলকাতা। মৃত্যুর সংখ্যাও সবচেয়ে বেশি। তার পরেও জনসংখ্যার হিসেবে যত করোনা পরীক্ষা করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না কলকাতা পুর এলাকায়। এমন বার্তা স্বাস্থ্য দফতর থেকেই পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েক বার পাঠানো হয়েছে। এই কথা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নবান্নেও। অভিযোগ, অতিমারির প্রকোপ বাড়ার পরেও পুরসভা দিনে ১০০০ নমুনাও পরীক্ষা করছে না। তার মধ্যে আইসিএমআরের ঠিক করে দেওয়া আরটি-পিসিআর পরীক্ষা হচ্ছে দিনে মাত্র ৪০০টি। বাকিগুলি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বেসরকারি ল্যাবরেটরিগুলি ধরলে কলকাতায় দিনে করোনা পরীক্ষা হচ্ছে ২৫০০-৩০০০টি।

স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা পুর এলাকার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে মূলত এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে পুর এলাকা থেকে প্রতিদিন ১০০০টি নমুনা যাওয়ার কথা। এম আর বাঙুর, কেপিসি হাসপাতাল ও কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা সেফ হোম থেকে আসার কথা আরও ৩০০টি নমুনা। এর বাইরে আর জি কর, এন আর এস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও ৪০০টি পরীক্ষা হওয়ার কথা। সরকারি হাসপাতালগুলিতে ১৭০০টি পরীক্ষার কথা থাকলেও তা ১০০০ ছাড়াচ্ছে না। এসএসকেএমে পুর এলাকা থেকে গড়ে ৪০০টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নমুনা আসছে। ১৫টি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতেও রোজ গড়ে প্রায় ২৫০০টি পরীক্ষা করা হচ্ছে। এর মধ্যে কলকাতার আশপাশের পুর এলাকার নমুনাও রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব, দেড় কোটি জনসংখ্যার কলকাতায় প্রতিদিন গড়ে ২৫০০-৩০০০টির বেশি পরীক্ষা হচ্ছে না। এই সংখ্যাটা অন্তত দ্বিগুণ হওয়া উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। নবান্নের শীর্ষমহলে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে বলেও স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে।

স্বাস্থ্য কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, দিল্লিতে এখন রোজ গড়ে ১০ হাজার নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। চেন্নাইয়ে এই সংখ্যাটা ১২ থেকে ১৩ হাজার, পুনেতে ১০ হাজার এবং মুম্বইয়ে সাত হাজার। চলতি মাসে কলকাতায় গড়ে প্রতিদিন ৭০০টি করে নতুন সংক্রমণের খবর এলেও পরীক্ষা বাড়ানো হয়নি।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

কলকাতা পুরসভা স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ মানেনি। পুর প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘আইসিএমআরের নির্দেশিকা পরামর্শ মেনে যে ভাবে নমুনা পরীক্ষা করা উচিত, তা করা হচ্ছে।’’ ওই কর্তা জানান, কলকাতা পুর এলাকায় ছ’টি গাড়ি আরটি-পিসিআর পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করছে। ১৯ অগস্ট ৪০০টি নমুনা সংগ্রহ করে এসএসকেএমে পাঠানো হয়েছে। পুরকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সকলের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। ১৯ অগস্ট অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য ৪৮৯টি নমুনা নেওয়া হয়েছে। পুরসভা প্রতিদিন ১০০০টি নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে। ১১টি বরোয় নমুনা সংগ্রহের পরিকাঠামো তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুর কর্তাদের ব্যাখ্যা, ‘‘আইসিএমআরের নির্দেশিকা অনুযায়ী উপসর্গ না থাকলে পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। তাই পুরসভার গাড়ি উপসর্গ থাকা ব্যক্তিদের লালারস সংগ্রহ করছে। গত কয়েক দিনে কলকাতায় সংক্রমণের রেখচিত্র নিম্নগামী হতে শুরু করেছে।’’

আরও পড়ুন: লকডাউনের দু’দিনই পাশ প্রশাসন

স্বাস্থ্য কর্তারা পুর কর্তাদের বক্তব্য মানতে নারাজ। তাঁরা জানাচ্ছেন, রাজ্যের সংক্রমণের সিংহভাগ এখনও কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া থেকে আসছে। কলকাতার জনঘনত্ব সর্বাধিক। প্রতিদিন গড়ে ৭০০ জন নতুন রোগী পাওয়া গেলে তাঁদের সংস্পর্শে আসা (জনপ্রতি অন্তত ৬ জন) ৪২০০ জনের তিন দিনে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। তাতেই সংক্রমিতদের বাছাই করা সম্ভব হবে। কিন্তু কলকাতা পুর এলাকায় সেই কাজে ঢিলেমি হচ্ছে বলেই নবান্নে স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হয়েছে।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE