Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রাজ্যপাল ও রাজ্যের সংঘাতে ‘শান্তির দূত’ কি এডিস

রাজভবনের বক্তব্য, সম্প্রতি তাদের অনুরোধ পাওয়া মাত্রই পুরসভার দল এসে সমস্ত চত্বর ঘুরে দেখে। প্রয়োজনমতো যে কোনও সময়ে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে।

 মশার খোঁজে রাজভবন পরিদর্শনে গিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

মশার খোঁজে রাজভবন পরিদর্শনে গিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ কলকাতা পুরসভার প্রতিনিধি দল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১৯
Share: Save:

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজ্য ও রাজ্যপালের ‘সংঘাত’ এখনও অব্যাহত। কিন্তু যে এডিস মশার দৌরাত্ম্য নিয়ে তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে চারদিক, একমাত্র তা নিয়েই এই দু’পক্ষের কোনও সংঘাত নেই। বরং এ বিষয়ে রাজভবন ও কলকাতা পুরসভা পরস্পরের প্রতি ‘সন্তোষ’ প্রকাশ করেছে। যা নিয়ে পুর অন্দরের একাংশের রসিকতা, রাজ্য-রাজ্যপালের মধ্যে চলা ‘দ্বৈরথের’ মাঝে একমাত্র ‘শান্তির দূত’ কি তা হলে এডিস মশাই!

রাজভবনের বক্তব্য, সম্প্রতি তাদের অনুরোধ পাওয়া মাত্রই পুরসভার দল এসে সমস্ত চত্বর ঘুরে দেখে। প্রয়োজনমতো যে কোনও সময়ে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে। আবার পুরসভারও এ বিষয়ে বক্তব্য, ‘রাজার বাড়ি’ বলে কথা! ফলে সব সময়েই পুরসভার ‘স্ক্যানার’-এ রয়েছে রাজভবন।

পুরসভা সূত্রের খবর, রাজভবন মশার আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে কি না, তা ঘুরে দেখতে সম্প্রতি পুরসভার কাছে অনুরোধ এসে পৌঁছেছিল। রাজভবন চত্বর ঘুরে দেখে প্রয়োজনে মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস করা এবং ডেঙ্গি রুখতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল। রাজ্যের ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে যখন সর্বস্তরে চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে, তখন রাজভবনের এহেন অনুরোধ পেয়ে সঙ্গেসঙ্গে কাজে নামে পুরসভা। একজন কনসালট্যান্ট এন্টোমোলজিস্টের নেতৃত্বে একটি পুর প্রতিনিধি দল রাজভবন পরিদর্শনে যায়।

পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, কোথাও ‘কনসালট্যান্ট এন্টোমোলজিস্ট’ পাঠানো হচ্ছে মানেই সেই জায়গার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রায় ২৭ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রাজভবনের চরিত্র এমনিতে ইট-কাঠ-কংক্রিটের শহুরে জঙ্গলের থেকে কিছুটা আলাদা। পতঙ্গবিদদের একাংশের মতে, ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিস ইজিপ্টাই মশা তো বটেই, গাছপালা বেশি থাকার কারণে রাজভবন চত্বরে এডিসের আর এক প্রজাতি এডিস অ্যালবোপিকটাসের থাকার আশঙ্কাও অনেকটাই বেশি।

সেই মতো পরামর্শদাতা পতঙ্গবিদের নেতৃত্বে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয় রাজভবন চত্বর। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি ছোটখাটো পাত্র পড়ে থাকা ছাড়া আর কিছু নজরে পড়েনি। রাজভবনের ভিতরের বাঁশঝাড়েও কয়েকটি কাটা বাঁশের কোটর বালি ও মাটি দিয়ে বোজানো বলে দেখা যায়। ওই পুর প্রতিনিধিদলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘কাটা বাঁশের গোড়ায় জল জমে এডিসের লার্ভা জন্মানোর আশঙ্কা থাকে। তাই যত বারই রাজভবন পরিদর্শন করেছি, তত বারই সেগুলি বুজিয়ে দিতে বলি। রাজভবন যে সেই পরামর্শ গুরুত্ব দিয়ে শুনেছে, বালি-মাটি দিয়ে বাঁশের কোটর বোজানোই তার প্রমাণ।’’

এ বিষয়ে পতঙ্গবিদেরা বছর তিনেক আগের একটি ঘটনার কথা মনে করাচ্ছেন। সে সময়ে তৎকালীন মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) তথা বর্তমান ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের নেতৃত্বে একটি দল রাজভবন পরিদর্শনে গিয়ে বাঁশের কোটরের জমা জলে টক্সোরিঙ্কাইটিসের লার্ভা পেয়েছিল। এই টক্সোরিঙ্কাইটিসকে বলা হয় ‘বন্ধু-মশা’। কারণ সে ম্যালেরিয়ার বাহক অ্যানোফিলিস ও ডেঙ্গির জীবাণু বহনকারী এডিসের লার্ভা খেয়ে ফেলে। রাজভবনের গাছপালার চরিত্র অনুযায়ী সেখানে এখনও ‘বন্ধু-মশা’ থাকতে পারে বলে অনুমান পতঙ্গবিদদের একাংশের। পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানাচ্ছেন, এমনিতে ডেপুটি মেয়রের নির্দেশে ডেঙ্গিপ্রবণ যে কোনও এলাকায় পুরসভার ওয়ার্ডভিত্তিক মশাদমন বাহিনী ও র‌্যাপিড অ্যাকশন দল নিয়মিত নজরদারি করে। দেবাশিসবাবুর কথায়, ‘‘রাজভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গার দিকে সব সময়েই আমাদের বিশেষ নজর থাকে। তবে সেখানে আশঙ্কার কিছু পাওয়া যায়নি। আমরা জানিয়েছি, ওদের সমস্ত রকম সহযোগিতা করতে আমরা ২৪ ঘণ্টা প্রস্তুত।’’ রাজভবনের এক পদস্থ আধিকারিকও বলছেন, ‘‘পুরসভার দল নিয়মিত নজরদারিতে আসে। এখানে কোনও সমস্যা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE