গোবরজনার কালী। নিজস্ব চিত্র।
বঙ্কিমচন্দ্রের ‘দেবী চৌধুরাণী’র সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া মালদহের সব থেকে বড় পুজো এবার জৌলুসহীন ভাবেই সম্পন্ন হবে। প্রায় সাড়ে তিনশো বছরের পুরনো রতুয়ার গোবরজনা গ্রামে এই পুজোয় প্রতি বছর প্রচুর পাঁঠা বলি হয়, বড় মেলা বসে। সে সবের কিছুই থাকছে না এবার।
মালদহ শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে রতুয়া ২ নম্বর ব্লকের আড়াইডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত গোবরজনা গ্রাম। এক সময় ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল গোটা এলাকা। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে মরা কালিন্দ্রী নদী। জনশ্রুতি, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবী চৌধুরাণী' উপন্যাসের চরিত্র ভবানী পাঠক ও দেবী উত্তরবঙ্গ যাওয়ার পথে কালিন্দ্রী নদীর তীরে এই গোবরজনায় রাত্রিযাপন করেন। সকালে তাঁদের বজরাটি নদীর পাড়ে আটকে যায়। পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের মূর্তি গড়ে এখানেই পুজো করেন ভবানী পাঠক। তার পর বজরা চলতে শুরু করে।
এই জনশ্রুতি অনেকেই অবশ্য বিশ্বাস করেন না। তাঁদের দাবি, ভবানী পাঠক আসার অনেক আগে থেকেই পুজো হয়ে আসছে। রতুয়ার গোবরজনা কালী মন্দিরের পুজো নাকি রাজপুতদের শুরু করা। সাড়ে তিনশো বছর আগে গোবরজনা-সহ সংলগ্ন জঙ্গলে ঘেরা গ্রামগুলিতে রাজপুতদের বাস ছিল। তাঁরাই ঘন জঙ্গলে মন্দির স্থাপন করে কালীপুজো শুরু করেন। এখন সেই পুজোর দায়িত্ব রয়েছেন সুধাংশু চৌধুরী ও তাঁর পরিবার। কিন্তু পারিবারিক হলেও এই পুজো সর্বজনীনতার ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ।
গোবরজনার এই কালী পুজোয় শুধু মালদহের নয় পাশের রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড থেকেও মানুষ আসেন। ভক্তদের অনেকের বিশ্বাস, মন্দির থেকে বলির রক্তের স্রোত মরা কালিন্দ্রী নদীর জলে মেশার পরই ‘তুষ্ট’ হন মা কালী। এই পুজোর সময় গোবরজনা গ্রামজুড়ে বসে মেলা। চতুর্দশীর দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় বেচা-কেনা। কিন্তু এবার তার কিছুই থাকছে না। করোনা বিধি মেনে পুজোর আয়োজন হচ্ছে। মন্দির চত্বরে মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। ভিড় সামলাতে থাকছে অতিরিক্ত স্বেচ্ছাসেবক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy