ছবি পিটিআই।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য স্বামী বারণ করেছিলেন কলকাতায় আসতে। কিন্তু দীর্ঘ অপেক্ষার পরে স্পিচ থেরাপিস্টের ডেট পেয়েছিলাম। তাই আর বারণ শুনিনি। জোর করেই চার বছরের ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ি। কথা ছিল, ঠিক তার পরের সপ্তাহেই স্বামী এসে আমাদের আলিপুরদুয়ারে নিয়ে যাবেন। ট্রেনের টিকিটও কাটা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব বন্ধ হয়ে গেল।
আড়াই বছর বয়সে আমার ছেলে সুপ্রতিমের অটিজ়ম ধরা পড়ে। কথাও পরিষ্কার নয়। তখন থেকেই ওকে নিয়ে থেরাপির জন্য ছোটাছুটি শুরু। কিন্তু আলিপুরদুয়ারে সেই সুবিধা বিশেষ নেই। তাই প্রায় প্রতি মাসেই কলকাতায় আসতে হয়। কখনও এক-দু’মাস কলকাতায় থেকে চলে ওর স্পিচ থেরাপি, বিশেষ শিক্ষা। এ ছাড়া বাঘা যতীনে যাই ‘খেলাধুলো’র ক্লাসে। আলিপুরদুয়ারে থাকতেই আগাম অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে শহরে আসি। এখানে থেরাপিস্টকে দেখিয়ে কিছু কাজ নিয়ে ফিরে যাই। সে সব ছেলেকে শেখানো হলে আবার এক-দু’মাস পরে স্বামী আমাদের কলকাতায় পৌঁছে দিয়ে যেতেন।
এ বার লকডাউন শুরুর আগের সপ্তাহে, ১৭ মার্চ কলকাতায় এসেছি। ক্লাসও করেছি। কিন্তু তার পরেই সব পরিবহণ বন্ধ হয়ে গেল। রাজপুরের ফ্ল্যাটে আমি আর ছেলে এখন একা। আপনজনেরা সবাই দূরে থাকেন। ফলে এই বিপদে কাউকেই পাচ্ছি না। ভেবেছিলাম ২২ মার্চ জনতা কার্ফুর পরে অন্তত দিন কয়েকের জন্য ট্রেন-বাস চলবে। তার মধ্যে বাড়ি ফিরে যেতে পারব। কিন্তু তা হল না। জনতা কার্ফুর পরের দিন, সোমবার সকালে তাও একবার চেষ্টা করেছিলাম উলুবেড়িয়ায় আত্মীয়দের কাছে যাওয়ার। কিন্তু কোনও গাড়ি যেতে রাজি হল না। রাতারাতি সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়লাম।
আরও পড়ুন: করোনা হাসপাতালে মোবাইলের ব্যবহার নিষিদ্ধ করল রাজ্য সরকার
ছেলের থেরাপির সরঞ্জাম, পড়ানোর কোনও জিনিস এখানে নেই। ফলে ঘরে বসে কোনও মতে কাজ করছি। পরিচিত কেউ নেই, পুরোপুরি ঘরবন্দি, থেরাপি বন্ধ, বাবাও কাছে নেই। সব মিলিয়ে ছেলেও খুব অস্থির। ভিডিয়ো কলে ছেলে বাবাকে অনেক কিছু বলতে চায়। কথা পরিষ্কার নয় বলে শুধু ‘‘বাবা আয়!’’ বলে ডাকে। তাই ও ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে পুরোটা সময় ওর সঙ্গেই থাকি। থেরাপির কাজ করাই, খেলি, গান-নাচ চলে। এ দিকে দোকান-বাজারও তো আমাকেই করতে হচ্ছে। তাই ছেলে যখন ঘুমিয়ে থাকে তারই ফাঁকে ব্যাঙ্কে যাওয়া, রান্না ও ঘরের অন্য কাজ সেরে রাখি। ভোর পাঁচটায় উঠে বাজারে গিয়ে চার-পাঁচ দিনের মতো আনাজ কিনে আনছি।
আরও পড়ুন: আরজি কর, কলকাতা মেডিক্যালে আক্রান্ত আরও চিকিৎসক-নার্স, কর্মী সঙ্কটের আশঙ্কা
এ ভাবে টানতে পারছি না। ছেলের মনে খুব চাপ পড়ছে। তাই এর মধ্যে একটি গাড়ি জোগাড় করে ছেলেকে নিয়েই বারুইপুরে এসপি-র সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। ওঁকে সব জানিয়ে আলিপুরদুয়ারে ফেরার অনুমতি নিয়ে এসেছি। তবে গাড়ি এখনও ঠিক হয়নি। এতটা রাস্তা ছেলেকে নিয়ে কী ভাবে যাব, এখন সেটাই ভেবে চলেছি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy